পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোয়ালদের পথে, ২১ শে জুন, >brsミッ আজ সমস্তদিন নদীর উপর ভেসে চলেছি। আশ্চর্য্য এই বোধ হচ্চে যে, কতবার এই রাস্ত দিয়ে গেছি এই বোটে চড়ে জলে জলে বেড়িয়েছি এবং নদীর দুইতীরের মাঝখান দিয়ে ভেসে যাবার যে একটা বিশেষ আনন্দ আছে সে উপভোগ করেছি— কিন্তু দিনদুই ডাঙায় বসে থাকলে সেটা ঠিকটা আর মনে থাকে না । এইযে একলাটি চুপকরে বসে চেয়ে থাকা—দুইধারে গ্রাম ঘাট শস্যক্ষেত্র চর, বিচিত্র ছবি দেখা দিচ্চে এবং চলে যাচ্চে, আকাশে মেঘ ভাস্চে এবং সন্ধ্যের সময় নানারকম রং ফুটুছে ;– নেীকে চলেছে, জেলেরা মাছধরচে, অহৰ্নিশি জলের একপ্রকার আদরপরিপূর্ণ তরল । শব্দ শোনা যাচ্চে—সন্ধেবেলায় বিস্তৃত জলরাশি শ্রান্ত নিদ্রিত শিশুর মত একেবারে স্থির হয়ে যাচ্চে এবং উন্মুক্ত আকাশের সমস্ত তারা মাথার উপরে জেগে চেয়ে আছে— গভীররাত্রে যেদিন ঘুম নেই সেদিন উঠে বসে দেখি অন্ধকারাচ্ছন্ন দুই কুল নিদ্রিত, মাঝে মাঝে কেবল গ্রামের বনে শৃগাল ডাকচে, এবং পদ্মার নীরব খরস্রোতে ঝুপাপ করে পাড় খসে খসে পড়ছে—এই সমস্ত পরিবর্তনশীল ছবি যেমন যেমন চখে পড়তে থাকে আমনি মনের ভিতরে একটা কল্পনার স্রোত বইতে থাকে এবং তার দুইপারে তটশ্যের মত নব নব আকাঙ্ক্ষার চিত্র দেখা দিতে থাকে। হয়ত সম্মুখের দৃশ্যটা খুব একটা চমৎকার কিছু নয়—একটা হলদে রকমের তৃণতরুশূন্য বালির চর ধুধু করচে—তারি গায়ে একটা জনশূন্য নেীকে বাধা রয়েছে এবং আকাশের ছায়ার ফিকে নীলবর্ণ নদী বয়ে চলে যাচ্চে—দেখে মনের ভিতরে কি রকম করে বলতে পারিনে । বোধ হয় সেই ছেলেবেলায় যখন আরব্য উপন্যাস পড়তুম, সিন্ধবাদ নানা নুতন দেশে বাণিজ্য করতে বাহির হত, ভূত্যশাসিত আমি তোষাখানার মধ্যে রুদ্ধ হয়ে বসে বসে দুপুর বেলায় সিন্ধবাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতুম তখন যে আকাঙ্ক্ষাটা মনের মধ্যে জন্মেছিল