পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদহ, ৮ই মে, ১৮৯৩ । কবিতা আমার বহুকালের প্রেয়সী—বোধ হয় যখন আমার রথীর মত বয়স ছিল তখন থেকেই আমার সঙ্গে বাকদত্ত হয়েছিল। তখন থেকে আমাদের পুকুরের ধারে বটের তলা, বাড়িভিতরের বাগান, বাড়িভিতরের একতলার অনাবিষ্কৃত ঘরগুলো, এবং সমস্ত বাহিরের জগৎ, এবং দাসীদের মুখের সমস্ত রূপকথা এবং ছড়াগুলো, আমার মনের মধ্যে ভারি একটা মায়াজগৎ তৈরি করছিল । তখনকার সেই আবছায়া অপূৰ্ব মনের ভাব প্রকাশ করা ভারি শক্ত –কিন্তু এই পৰ্য্যন্ত বেশ বলতে পারি কবিকল্পনার সঙ্গে তখন থেকেই মালাবদল হয়েগিয়েছিল । কিন্তু ও মেয়েটি পয়মন্ত নয়, তা স্বীকার করতে হয় ;—আর যাই হোক সৌভাগ্য নিয়ে আসেন না । সুখ দেন না বলতে পারিনে, কিন্তু স্বস্তির সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই । যাকে বরণ করেন তাকে নিবিড় আনন্দ দেন কিন্তু এক এক সময় কঠিন আলিঙ্গনে হৃৎপিণ্ডটি নিংড়ে রক্ত বের করে নেন । যে লোককে তিনি ননির্বাচন করেন, সংসারের মাঝখানে ভিত্তিস্থাপন করে গৃহস্থ হয়ে স্থির হয়ে আয়েস করে বসা সে লক্ষ্মীছাড়ার পক্ষে একেবারে অসম্ভব । কিন্তু আমার আসল জীবনটি তার কাছেই বন্ধক আছে। সাধনাই লিখি আর জমিদারিই দেখি যেমনি কবিতা লিখতে আরম্ভ করি ওমনি আমার চিরকালের যথার্থ আপনার মধ্যে প্রবেশ করি—আমি বেশ বুঝতে পারি এই আমার স্থান। জীবনে জ্ঞাতসারে এবং অজ্ঞাতসারে অনেক মিথ্যাচরণ করা যায় কিন্তু কবিতায় কখনো মিথ্যা কথা বলিনে—সেই আমার জীবনের সমস্ত গভীর সত্যের একমাত্র আশ্রয়স্থান ।