পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদহ, ৩রা জুলাই, >brぬペ) কাল সমস্ত রাত তীব্র বাতাস পথের কুকুরের মত হুহু করে কেঁদেছিল—আর বৃষ্টিও অবিশ্রাম চলচে । মাঠের জল ছোট ছোট নিবারের মত নানাদিক থেকে কল্‌কল করে নদীতে এসে পড়চে–চাষার ওপারের চর থেকে ধান কেটে আনবার জন্যে কেউবা টোগা মাথায় কেউবা একখানা কচুপাত মাথার উপর ধরে ভিজতে ভিজুতে খেয়া নৌকায় পার হচ্চে—বড় বড় বোঝাই নেীকেণর মাথার উপর মাঝি হাল ধরে বসে বসে ভিজচে, আর মাল্লারা গুণ র্কাধে করে ডাঙার উপর ভিজতে ভিজতে চলেচে– এমন দুৰ্য্যোগ তবু পৃথিবীর কাজকৰ্ম্ম বন্ধ থাকবার যো নেই। পার্থীরা বিমর্ষ মনে তাদের নীড়ের মধ্যে বসে আছে কিন্তু মানুষের ছেলেরা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে । তামার বোটের সামনে দুটি রাখালবালক একপাল গরু নিয়ে এসে চরাচ্চে ; গরুগুলি কচরমচর শব্দ করে এই বর্ষাসতেজ সরসশ্বামল সিক্ত ঘাসগুলির মধ্যে দুখ ভরে দিয়ে ল্যাজ নেড়ে পিঠের মাছি তাড়াতে তাড়াতে স্নিগ্ধ শান্ত নেত্ৰে আহার করে করে বেড়াচ্চে—তাদের পিঠের উপর বৃষ্টি এবং রাখালবালকের যষ্টি অবিশ্রাম পড়চে, দুইই তাদের পক্ষে সমান অকারণ, অন্যায় এবং অনাবশ্বক, এবং দুই তারা সহিষ্ণুভাবে বিনা-সমালোচনায় সয়ে যাচ্চে এবং কচরমচর করে ঘাস খাচ্চে । এই গরুগুলির চোখের দৃষ্টি কেমন বিষঃ শাস্ত সুগম্ভীর স্নেহময়—মাঝের থেকে মানুষের কৰ্ম্মের বোঝা এই বড় বড় জস্তগুলোর ঘাড়ের উপর কেন পড়ল ? নদীর জল প্রতিদিনই বেড়ে উঠচে । পশুদিন বোটের ছাতের উপর থেকে যতখানি দেখা যেত, আজ, বোটের জানলায় বসে প্রায় ততটা দেখা যাচ্চে—প্রতিদিন সকালে উঠে দেখি তটদৃশ্ব অল্প অল্প করে প্রসারিত হয়ে যাচ্চে । এতদিন সামনে ঐ দূর গ্রামের গাছপালার মাথাটা সবুজ পল্লবের মেঘের মত দেখা যেত—আজ সমস্ত বনটা আগাগোড়া আমার সম্মুখে এসে উপস্থিত হয়েছে। ডাঙ এবং জল দুই লাজুক প্রণয়ীর মত অল্প অল্প করে পরস্পরের কাছে অগ্রসর হচ্চে। লজ্জার