পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o পতিসর, ১৯শে মার্চ, ১৮৯৪। জ্যোৎস্না প্রতি রাত্রেই অল্প অল্প করে ফুটে উঠচে । আমি তাই আজকাল সন্ধ্যের পরেও অনেকক্ষণ বাইরে বেড়াই। নদীর এপারের মাঠে কোথাও কিছু সীমাচিতু নেই, গাছপালা নেই—চষ। মাঠে একটি ঘাসও নেই, কেবল নদীর ধারের ঘাসগুলো প্রখর রৌদ্রে শুকিয়ে হলদে হয়ে এসেছে। জ্যোৎস্নায় এই ধুধু শূন্য মাঠ ভারি অপূৰ্ব্ব দেখতে হয় –সমুদ্র এইরকম অসীম বলে মনে হয় কিন্তু তার একটা অবিশ্রাম গতি এবং শব্দ আছে—এই মাটির সমুদ্রের কোথাও কিছু গতি নেই শব্দ নেই বৈচিত্র্য নেই প্রাণ নেই–ভারি একটা উদাস ঘৃত শূন্যতা—চলবার মধ্যে কেবল এক প্রান্তে আমি একটি প্রাণী চলচি এবং আমার পায়ের কাছে একটি ছায়া চলে বেড়াচ্চে । বহুদূরের মাঠে এক এক জায়গায়—যেখানে গত শস্তের শুকনে গোড়া কিছু অবশিষ্ট ছিল সেইখানে চাষার আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, মাঝে মাঝে কেবল সেই আগুনের শ্রেণী দেখা যাচে । একট প্রকাণ্ড বিস্তারিত প্রাণহীনতার উপর যখন অস্পষ্ট চাদের আলো এসে পড়ে তখন যেন একটা বিশ্বব্যাপী বিচ্ছেদশোকের ভাব মনে আসে–যেন একটি মরুময় বৃহৎ গোরের উপরে একটি শাদা কাপড়পর মেয়ে উপুড় হয়ে মুখ ঢেকে মুচ্ছিতপ্রায় নিস্তন্ধ পড়ে রয়েছে । ९९