পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদা ১৩ই আগষ্ট ১৮৯৪ । অহমিকার প্রভাবেই যে নিজের কথা বলতে চাই তা নয়। যেটা যথার্থ চিন্ত৷ করব, যথার্থ অনুভব করব, যথার্থ প্রাপ্ত হব, যথার্থরূপে তাকে প্রকাশ করে তোলাই তার স্বাভাবিক পরিণাম । ভিতরকার একটা শক্তি ক্রমাগতই সেইদিকে কাজ করচে । অথচ সে শক্তিটা যে আমারই তা মনে হয় না—সে একটা জগৎব্যাপ্ত শক্তি । নিজের কাজের মাঝখানে নিজের আয়ত্তের বহিভূত আর একটি পদার্থ এসে তারই স্বভাবমত কাজ করে । সেই শক্তির হাতে আত্মস পর্পণ করাই জীবনের আনন্দ । সে যে কেবল প্রকাশ করায় তা নয়, সে অনুভব করায়, ভালবাসায়, সেইজন্যে অনুভূতি নিজের কাছে প্রত্যেকবার নুতন ও বিস্ময়জনক । নিজের শিশু কন্যাকে যখল ভাললাগে তখন সে বিশ্বের মূল রহস্য মূল সৌন্দর্য্যের অন্তবৰ্ত্ত হয়ে পড়ে—এবং স্নেহউচ্ছ,সি উপাসকের মত হয়ে আসে । আমার বিশ্বাস আমাদের প্রীতিমাত্রই রহস্যময়ের পূজা ; কেবল সেটা আমরা অচেতনভাবে করি । ভালবাসামাত্রই আমাদের ভিতর দিয়ে বিশ্বের অস্তরতম একটি শক্তির সজাগ আবির্ভাব,—যে নিত্য আনন্দ নিখিল জগতের মূলে সেই আনন্দের ক্ষণিক উপলব্ধি । নইলে ওর কোনো অর্থই থাকে না । বিশ্বজগতে সৰ্ব্বব্যাপী আকর্ষণশক্তি যেমন—ছোটবড় সৰ্ব্বত্রই তার যেমন কাজ অন্তরজগতে সেই রকম একটা বিশ্বব্যাপী আনন্দের আকর্ষণ আছে । সেই আকর্ষণেই আমরা বিশ্বের মধ্যে সৌন্দৰ্য্য ও হৃদয়ের মধ্যে প্রেম অনুভব করি,—জগতের ভিতরকার সেই অনস্ত আনন্দের ক্রিয়া আমাদের মনের ভিতরেও কাৰ্য্য করে । আমরা সেটাকে যদি বিচ্ছিন্নভাবে দেখি তবে তার যথার্থ কোনো অর্থ থাকে না । প্রকৃতির মধ্যে মানুষের মধ্যে আমরা কেন আনন্দ পাই তার একটিমাত্র সদুত্তর হচ্চে, আনন্দাদ্ধে্যুব খন্বিমানি ভুতানি জায়স্তে ।