পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ২ • • ) নল গড়াচ্চে, দরজার কাছে জমকালো কাপড়পর কালে হাবষি পাহারা দিচ্চে, এবং এই রহস্যপূর্ণ অপরিচিত সুদূর দেশে, এই ঐশ্বৰ্য্যময় সৌন্দর্য্যময় ভয়ভীষণ বিচিত্র প্রাসাদে, মানুষের হাসিকান্ন। আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কত শতসহস্ররকমের সম্ভব অসম্ভব গল্প তৈরি হচ্চে । আমার এই সাজাদপুরের দুপুরবেল গল্পের দুপুরবেলা । মনে আছে ঠিক এই সময়ে এই টেবিলে বসে আপনার মনে ভোর হয়ে পোষ্টমাষ্টার গল্পট লিখেছিলুম। আমিও লিখছিলুম এবং আমার চারদিকের আলো, বাতাস ও তরুশাখার কম্পন তাদের ভাষা যোগ করে দিচ্ছিল। এই রকম চতুর্দিকের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিশে গিয়ে নিজের মনের মত একটা কিছু রচনা করে যাওয়ার যে সুখ তেমন সুখ জগতে খুব অল্পই আছে । আজ সকালে বসে “ছড়া” সম্বন্ধে একটা লেখা লিখতে প্রবৃত্ত হয়েছিলুম—বড় ভাল লাগছিল । ছড়ার রাজ্যে আইনকানুন নেই, মেঘরাজ্যের মত । দুর্ভাগ্যক্রমে যে রাজ্যেই থাকি আইনকানুনের বৈষয়িক রাজ্যকে বাধা দেবার জো নেই ; আমার লেথার মাঝখানে তারই একটা উপদ্রব উপস্থিত হল—আমার মেঘের ইমারত উড়িয়ে দিলে । এইসব ব্যাপারে আহারের সময় এসে পড়ল। দুপুরবেলায় পেটভরে খাওয়ার মত এমন জড়ত্বজনক আর কিছুই নেই । আমরা বাঙালীরা কসে মধ্যাহ্বভোজন করি বলেই মধ্যাকুটাকে হারাই । দরজা বন্ধ করে তামাক খেতে খেতে পান চিবতে চিবতে পরিতৃপ্ত নিদ্রার আয়োজন হতে থাকে, তাতেই আমরা বেশ চিক্‌চিকে গোলগল হয়ে উঠি । অথচ বাংলাদেশের বৈচিত্র্যহীন সুদূরপ্রসারিত সমতল শস্যক্ষেত্রের মধ্যে জনহীন শ্রান্ত মধ্যাকু যেমন গভীরভাবে বৃহৎ ভাবে বিস্তীর্ণ হতে পারে এমন আর কোথাও না । காம 9 கடிை