কাল কেবল বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে একখানি ছোট কবিতা লিখেছি এবং একটি তিব্বতভ্রমণের বই পড়েছি। এরকম জায়গায় নভেল আমি ছুঁতে পারিনে। এই জনশূন্য মাঠের মধ্যে, শালবনের বেষ্টনে, সমস্ত-দরজা খোলা জাজিমপাতা দোতলার একলা ঘরে, পাখীদের করুণকলধ্বনিপূর্ণ স্বপ্নাবেশময় শরৎমধ্যাহ্লে বিলাতি নভেল কোনোমতেই খাপ খায় না। ভ্রমণবৃত্তান্তের একটা মস্ত সুবিধা এই যে তার মধ্যে অবিশ্রাম গতি আছে অথচ প্লটের বন্ধন নেই—মনের একটি অবারিত স্বাধীনতা পাওয়া যায়। এখানকার জনহীন মাঠের মাঝখান দিয়ে একটি রাঙা রাস্তা চলে গেছে; সেই রাস্তা দিয়ে যখন দুইচার জন লোক কিম্বা দুটো একটা গোরুর গাড়ি মন্থর গমনে চলতে থাকে তার বড় একটা টান আছে;—মাঠ তাতে আরো যেন ধু ধু করে ওঠে; মনে হয় এই মানুষগুলো যে কোথায় যাচ্চে তার যেন কোনো ঠিকানা নেই। ভ্রমণবৃত্তান্তের বইও আমার এই মানসিক নিরালার মধ্যে সেই রকম একটি গতিপ্রবাহের ক্ষীণ রেখা অঙ্কিত করে দিয়ে চলে যেতে থাকে—তাতে করে আমার মনের সুবিস্তীর্ণ নিস্তব্ধ নির্জ্জন আকাশটি আরো যেন বেশি করে অনুভব করতে পারি।
পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২০
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বোলপুর,
১৯শে অক্টোবর, ১৮৯৪।
