পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বোলপুর, ৩১শে অক্টোবর ১৮৯৪ । প্রথম শীতের আরম্ভে সমস্ত দিন ধরে যে একটা উত্তরে বাতাস দিতে থাকে সেইটে আজ সকাল থেকে সুরু হয়েছে । বাতাসটা হীহী করতে করতে আসচে আর আমলকি তরুশ্রেণীর পাতাগুলি হলদে হয়ে উঠে কণপতে কাপতে ঝরে ঝরে পড়ে BBB S BBBBB BBBBBB BBBS BB BBBBB BBBB BBBB BBBDSBBB কণপচে, ঝরচে এবং দীর্ঘনিশ্বাসে আকুলিত হয়ে উঠচে । দুপুরবেলাকার রৌদ্রক্লাস্ত বিশ্রামপূর্ণ বৈরাগ্যে, ঘন আম্রশাখায় ঘুঘুর অবিশ্রামকুজনে এই ছায়ালোকখচিত স্বপ্নাতুর প্রহরগুলাকে যেন বিরহবিধুর করে তুলচে । আমার টেবিলের উপরকার ঘড়ির শব্দটাও এই মধ্যান্ত্রের সুরের সঙ্গে যেন তাল রেখে চলেছে, ঘরের ভিতরে সমস্ত দুপুরবেলাটা কাঠবিড়ালীর ছুটtছুটি চলছে । ফুলো ল্যাজ, কালো এবং ধূসর রেখায় অঙ্কিত রোমশ নরম গা, ছোট ছটি কালে ফোটার মত ফুটি চঞ্চল চোখ, নিতান্তই নিরীহ অথচ অত্যস্ত কেজো লোকের মত ব্যস্ত ভাবট দেখে আমার বেশ মজা লাগে । এই ঘরের কোণে লোহার জাল দেওয়া আলমারিতে ডাল চাল প্রভূতি আহাৰ্য্য সামগ্রী এই সমস্ত লোভীদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়—ঔৎসুক্যব্যগ্র নাসিকাটি নিয়ে তারা সারাদিন এই অলিমরিটার চারিদিকে ছিদ্র খুজে খুজে বেড়াচ্চে । ছ চারটা কণা যা আলমারির বাইরে বিক্ষিপ্ত থাকে সেইগুলিকে সন্ধান করে নিয়ে সামনের গুটিকয়েক ছোট তীক্ষ দস্ত দিয়ে কুটুকুট করে ভারি তৃপ্তির সঙ্গে তারা আহার করে ; মাঝে মাঝে লেজের উপর ভর দিয়ে সোজা হয়ে বসে’ সামনের দুটি হাত জোড় করে সেই শস্যকণাগুলিকে মুখের মধ্যে গুছিয়েগাছিয়ে জুত করে নিতে থাকে,— এমন সময় আমি একটুখানি নড়েছি কি অমনি চকিতের মধ্যে লেজটি পিঠের উপর তুলে দিয়ে দে-দৌড় । যেতে যেতে হঠাৎ একবার অৰ্দ্ধপথে পাপোষটার উপর থেমে একটা পা তুলে ফস করে একটা কাণ চুলকে নিয়ে আবার এসে উপস্থিত—এমনি সমস্ত বেলাই কুট কাট ছড় ছড়, এবং তৈজসপত্রের মধ্যে টুংটাং ঝুনঝুন চলচেই ।