পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদহ, ৭ই এপ্রেল, ১৮৯২ । সকাল থেকে সুন্দর বাতাস দিচ্চে—কোন কাজ করতে ইচ্ছে করচে না । বোধ হয় এগারোট। কিম্ব সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে—কিন্তু এ পর্য্যন্ত লেখা পড়া কিন্ধ । কোন কাজে হাত দিইনি। সকাল থেকে একটি চেকিতে স্থির হয়ে বসে আছি । মাথার মধ্যে কত টুকরো টুকরো লাইন এবং কত অসমাপ্ত ভাব যাতায়াত করচে, কিন্তু সেগুলোকে একত্র করে বাধি কিম্বা পরিস্ফুট করে তুলি এমন শক্তি অনুভব করচিনে । সেই গানটা মনে পড়চে “পায়েরিয়া বাজে, ঝনক ঝনক ঝন ঝন নন নন নন” সুন্দর সকালবেলায় মধুর বাতাসে নদীর মাঝখানে মাথার মধ্যে সেইরকম ঝন নন নুপুর বাজচে–কিন্তু সে কেবল এদিক ওদিক থেকে অস্তরালে—কেউ ধরা দিচ্চে না, দেখা দিচ্চে না । তাই চুপচাপ করে বসে আছি। নদীর জল অনেকটা শুকিয়ে এসেচে, কোথাও এক কোমরের বেশি জল আর প্রায় নেই—তাই বোটটাকে নদীর প্রায় মাঝখানে বেঁধে রাখা কিছুই শক্ত হয়নি । আমার ডানদিকের পরে চরের উপরে চাষার চাষ করচে এবং মাঝে মাঝে গোরুকে জল খাইয়ে নিয়ে যাচ্চে—আমার বামপারে শিলাইদহের নারকেল এবং আমবাগান, ঘাটে মেয়েরা কাপড় কাচ চে, জল তুলচে, স্নান করচে এবং উচ্চৈস্বরে বাঙাল ভাষায় হাস্যালাপ করচে—যারা অল্পবয়সী মেয়ে তাদের জলক্রীড়া আর শেষ হয় না । একবার স্বান সেরে উপরে উঠচে আবার ঝুপ্ত করে জলে ঝাপিয়ে পড়চে—তাদের নিশ্চিন্ত উচ্চহাস্য শুনতে বেশ লাগে । পুরুষরা গম্ভীরভাবে এসে গোটাকতক ডুব মেরে তাদের নিত্যকৰ্ম্ম সমাপ্ত করে চলে যায়— কিন্তু মেয়েদের যেন জলের সঙ্গে বেশি ভাব । পরস্পরের যেন একটা সাদৃশ্য এবং সখিত্ব আছে—জল এবং মেয়ে উভয়েই বেশ সহজে ছল ছল জল জলু করতে থাকে, একটা বেশ সহজ গতি ছন্দ তরঙ্গ, দুঃখতাপে অল্পে অল্পে শুকিয়ে যেতে পারে কিন্তু আঘাতে একেবারে জন্মের মত দু’খানা হয়ে ভেঙে যায় না । সমস্ত কঠিন; পৃথিবীকে