পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ
১০৫

দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ

দোষী নির্দ্দোষ

 সেই মূর্চ্ছার পর হইতে সুশীলার জ্বর আরম্ভ হইল। বাল্যকাল হইতে শোক পাইয়া পাইয়া সুশালার শরীরে আর কিছুই ছিল না, তাঁহার শরীর ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছিল, তিনি এক প্রকার চিররুগ্ন হইয়া দাঁড়াইয়াছিলেন। অথচ তিনি মরিলে প্রমোদ ও কনককে দেখিবার কেহই নাই ভাবিয়া এতদিন অতি যত্নে জীবন-রক্ষা করিয়া আসিতেছিলেন মাত্র। কিন্তু শরীরের উপর আর তাঁহার আধিপত্য চলিল না।

 কনকের কষ্টের সীমা নাই। তাহার আহার নিদ্রা প্রায় রহিত হইয়াছে। সারাদিন কনক তাঁহার সেবা করে; তাহার যত্ন দেখিয়া সুশীল আশ্চর্য্য হইয়া ভাবেন কনক চোর, কনক মিথ্যাবাদী, কনকের ঈশ্বরে মন নাই, তবে কনক দেবীর ন্যায় যত্ন শিখিল কোথায়? এরূপ ভালবাসা, এরূপ সেবা ত অমানুষিক গুণ। যখনই কনকের বিষাদময়ী দেবী-প্রতিমার প্রতি তাঁহার দৃষ্টি পড়ে, তিনি মুগ্ধ হইয়া তাহার দিকেই চাহিয়া থাকেন—তাহার সেই আলুলায়িত কুন্তলজালে বেষ্টিত সরলসুন্দর মুখকান্তি দেখিয়া মুগ্ধ হইয়া চাহিয়া থাকেন।

 “কি ভয়ানক! এই দেবী মূর্ত্তির প্রশান্ত অমায়িকতা দেখিলে ইহার ভিতরে যে দোষ থাকিতে পারে, তাহা কে বিশ্বাস কবিবে? ইহাতে যদি দোষ থাকে, তবে বুঝি পৃথিবীতে কিছুই নির্দ্দোষ নাই তবে বুঝি পৃথিবীতে কাহাকেও বিশ্বাস করা যাইতে পারে না।” এই রূপ ভাবিতে ভাবিতে সুশীলর চক্ষু হইতে অশ্রুধারা পড়িয়া বালিস ভিজিয়া যায়। বালিকা কনক যথার্থ কারণ বুঝিতে না পারিয়া