পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
ছিন্নমুকুল

বরং দুই একটি বিচরণশীল পশুও সে শব্দে বাসস্থানে লুকাইল, সুতরাং নিরীহ পাখীগণকে মারিয়াই তাঁহাদের শীকার সাধ মিটাইতে হইল। যে বৃক্ষে সেই পলাতক পক্ষীটি আশ্রয় লইয়াছিল তাহার তলে আসিয়া প্রমোদ তাহাকে আর দেখিতে পাইলেন না। তাহার পরিবর্ত্তে উভয়ে মিলিয়া একের পর একে বহু বিহঙ্গ বধ করিলেন বটে কিন্তু তথাপি সেই বিশেষ পক্ষাটি মারিতে না পারার প্রমোদের নৈরাশ্য ঘুচিল না। শীকার শেষে তাঁহারা বৃক্ষতলে বসিয়াছেন—সহসা পত্রান্তরালে প্রমোদ তাহাকে দেখিতে পাইলেন, তৎক্ষণাৎ উৎফুল্ল হৃদয়ে উঠিয়া অতি সন্তর্পণে তাহার প্রতি লক্ষ্য করিয়া বন্দুক ছুঁড়িলেন কিন্তু এবারও লক্ষ্য বিফল হইল। পাখীটি অন্যবৃক্ষে উড়িয়া গেল। প্রমোদের ক্ষোভের সীমা রহিল না। তিনি মনের আবেগে, সেই পলাতক পক্ষীর অনুসরণ করিয়া, বৃক্ষতল হইতে বৃক্ষতলে ছুটিতে লাগিলেন। কিন্তু সম্ভবতঃ বহু জন্মের পুণ্যফলে বিহঙ্গপ্রবর প্রতিবারেই তাঁহার লক্ষ্য বার্থ করিতে লাগিল। ক্রমে সন্ধ্যা উপস্থিত; কিন্তু প্রমোদ শীকারের উৎসাহে এত উন্মত্ত যে, সেদিকে ভ্রূক্ষেপই নাই। যামিনীনাথ প্রমোদের এইরূপ নিরর্থক আগ্রহ দেখিয়া তাঁহাকে নিরস্ত করিবার জন্য দুই তিন বার বিফল চেষ্টা করিলেন। শ্রমক্লান্ত, ঘর্ম্মাক্ত, তথাপি প্রমোদ উৎসাহের সহিত সেই পক্ষীর উদ্দেশে অন্য একটি দূববর্ত্তী বৃক্ষের দিকে গমন করিলেন; যামিনীনাথকেও অগত্যা বন্ধুর অনুসরণ করিতে হইল। তাঁহারা বখন বৃক্ষতলে আসিয়া দাঁড়াইলেন তখন অন্ধকার হইয়া পড়িয়াছে, সুতরাং পাখীটিকে তখন আর দেখিতে পাইলেন না। হতাশ মনে বিশ্রাম করিবার জন্য তাঁহারা সেই বৃক্ষতলে বসিলেন। দেখিতে দেখিতে অগণ্য নক্ষত্র আকাশে ফুটিয়া উঠিল, ঝোপ-ঝাপে খদ্যোতপুঞ্জ জ্বলিতে আরম্ভ করিল, তাঁহারা তখন বাড়ী যাইবার মানসে বৃক্ষতল হইতে উঠিলেন। কানপুরে আসিয়া তাঁহারা এই অল্প-