পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
ছিন্নমুকুল

লাগিল তখন তাহার হৃদয় একটি অপূর্ব্ব আনন্দে পূর্ণ হইল। নীরজার প্রকৃতিই এমনি উপাদানে গঠিত যে মেঘের ডাকে তাহার হৃদয় নাচিয়া উঠিত, বিদ্যুৎ চমকিলে সে যেন তাহা ধরিবার আশায় ছুটোছুটি করিত, বৃষ্টি পড়িলে অনেক সময় সে তাহার সেই সুললিত দেহ খানি, নিবিড় জলবৎ কুন্তলরাশি ভিজাইয়া দয়ানন্দের তিরস্কাবের পাত্র হইত।

 সেদিন সে মেঘবৃষ্টির রুদ্রগম্ভীর শোভার মধ্যে আত্মবিস্মৃত হইয়া ভুলিয়া গেল এ তাহার পরিচিত অরণ্যতল নহে, এ অপরিচিত উদ্যানভূমি। বালিকা এইরূপ সময়ে মন্দিরের আলোক লক্ষ্য করিয়া যেমন বাড়ী ফিরিত তেমনি বজ্রধ্বনি হইবামাত্র অট্টালিকার আলোক লক্ষ্য করিয়া অভ্যাস বশতঃ গান গাহিতে গাহিতে প্রাচীর তলে আসিয়া আশ্রয় গ্রহণ করিল। অতীতের স্মৃতিতেই তাহার হৃদয় ভাসিতেছিল, বর্ত্তমান তাহার মন হইতে অপসৃত। তাহারই গানে সেদিন কনক ও সুশীলা মুগ্ধ হইয়াছিলেন।

 এদিকে সন্ন্যাসী বাড়ী আসিয়া নীরজাকে না দেখিয়া নদীতীরে খুঁজিতে গেলেন, গানের শব্দ লক্ষ্য করিয়া অট্টালিকাপ্রাচীরতলে আগমন করিলেন, সেই সময় বিদ্যুতালোকে মুক্তবাতায়ন পথে সুশীলার সহিত দেখা হইল। একবার দেখিয়া পরদিন তাঁহাকে দেখিবার ইচ্ছা তাঁহার আরও প্রবল হইল কিন্তু এতদিন পরে এখন আবার কোন্ ছুতায় কি বলিয়া পত্নীকে মুখ দেখাইতে আসিবেন? সেই দিন হইতে তাঁহার আর একটি ইচ্ছার সঞ্চার হইল। নীরজার সহিত প্রমোদের বিবাহ দিয়া সুশীলার পিতৃবংশ ও তাঁহার বংশ আবার এক করিতে তাঁহার অত্যন্ত ইচ্ছা হইল, কিন্তু দেখিলেন সে ইচ্ছাও পূর্ণ হইবে না। যামিনী নীরজাকে রক্ষা করিয়াছে, যামিনীকে তিনি জামাতা করিবেন বলিয়া প্রতিশ্রুত এখন অন্য কোন কথা মনে আনাই অন্যায়। পরদিনই দয়ানন্দ কন্যাকে লইয়া কানপুর যাত্রা করিলেন। দেখিলেন এখানে