পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৪
ছিন্নমুকুল

করিতেছিলেন। এই উপলক্ষে কখন কখনও পশ্চিমের নানা স্থানে তাঁহাকে চৌর্য্য নিবারণেও যাইতে হইত। সম্প্রতি এই উদ্দেশ্যে তিনি জল পথে ঘুরিতেছিলেন। সুশীলার মৃত্যুর দিন দৈব বশতঃ তিনিও এলাহাবাদে ছিলেন। দিনের বেলা সেখানকার সরকারী কার্য্য শেষ করিয়া রাত্রি কালে তিনি সুশীলার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গিয়া তাঁহার মৃত্যু সংবাদে কাতর হইয়া যখন পুনরায় নৌকায় উঠিতে যাইবেন, তখনই তীরদেশে কনককে দেখিতে পান। বােটে তাঁহার এক জন সহকারী ছিলেন, স্বাভাবিক অনুরাগে ঘরে পড়িয়া তিনি চিকিৎসা বিদ্যায় অনেকটা অভিজ্ঞতা লাভ করেন। তিনি পরীক্ষা করিয়া দেখিলেন বালিকা মৃত নহে। কিন্তু হাসপাতাল লইয়া যাইবার অপেক্ষা সহিবে না; যথাশীঘ্র বিশেষ যত্নশুশ্রূষা পাইলে রমণী প্রাণলাভ করিতেও পারে। এদিকে বিশেষ কার্য্যসূত্রে তখনি তাঁহাদের বােট না ছাড়িলেই নয়, তাঁহারা বালিকাকে বোটে তুলিয়া লইয়া, পুনর্জ্জীবিত করিতে সচেষ্ট হইলেন। মনে করিলেন আরোগ্য লাভ করিলে তাহার পরিচয় জানিয়া তাহাকে যথা স্থানে পৌঁছিয়া দিবেন।

 তিন চারি দিন অতীত হইল, রমণীর পীড়া ক্রমে উপশম হইয়া আসিতে লাগিল। আরাে তিন চার দিনে একটু একটু করিয়া তাহার চৈতন্য লাভ হইল। তিনি যখন মানুষ চিনিতে পারিলেন তখন এই অপরিচিত যুবাদিগের মধ্যে আপনাকে দেখিয়া বিস্মিত হইলেন। কিন্তু ক্রমে ক্রমে কনকের সমস্ত ঘটনা অল্প অল্প স্মরণ হইতে লাগিল। সুশীলার মৃত্যু ও শবদাহের পর তাহার নদীতে পড়িয়া যাইবার কথা ক্রমে মনে পড়িল। তাহা ছাড়া যদিও আর কিছুই মনে করিতে পারিল না তবুও কনক বুঝিল তাহার পর ইহাঁরা তাহাকে বাঁচাইয়াছেন। কনক ভাবিল, ইহাঁরা কে? তাহাকে বাঁচাইলেন কেন? মরিলেই সব দুঃখ ফুরাইয়া যাইত, আবার তাহার যন্ত্রণা