পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ
১২৯

ফেলিয়া বাঁচিত। ফিরিয়া আসিলেই সে অমনি কথা কহিতে পারিত না কিন্তু নীরব নয়নে তাঁহাকে কত মৃদু তিরস্কার করিত, মনে মনে বলিত “না, তোমার গল্প শুনিতে তোমাকে দেখিতে আমার যেমন ভাল লাগে কখনই তোমার তেমন ভাল লাগে না। হিরণ তাহা বুঝিয়া একটু যেন অপ্রতিভ হইয়া একটু আদরের হাসি হাসিয়া বলিতেন “নিতান্ত দরকার ছিল তাই গিয়েছিলুম, দেখ দেখি কাজ অসমাপ্ত রেখেই আবার কত শীঘ্র ফিরে এসেছি।” অমনি বালিকা সকল ভুলিয়া যাইত, আবার গল্প করিতে আরম্ভ করিত, কিন্তু একটি গল্পও তাহার কখনও শেষ হইত না, একটি কথাও যেন তাহার ভাল করিয়া বলা হইত না।

 কিন্তু তাহাদের সেই সুখ ফুরাইয়া আসিল। ক্রমে তাঁহারা এলাহাবাদে পৌঁছিলেন। তাঁহাদের আগমন বার্ত্তা পাইয়া প্রমোদ মহা আহ্লাদের সহিত কনককে লইয়া যাইবার জন্য ঘাটে আসিলেন। কতদিন কনকের সহিত দেখা হয় নাই, আর যে কখনও দেখা হইবে তাহারও আশা ছিল না, মনে মনে কনকের রক্ষাকর্ত্তাকে ধন্যবাদ দিতে দিতে নদীতীরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। হিরণ প্রমোদকে যে ইংরাজি চিঠি লেখেন তাহাতে তাঁহার পূর্ণ নাম সই ছিল না। ইংরাজি দস্তুর মত পদবীর পূর্ব্বে শুধু নামের প্রথম অক্ষর মাত্র লিখিয়াছিলেন! প্রমোদ সেই জন্য কে যে কনকের রক্ষাকর্ত্তা তাহা জানিতে পারেন নাই। এখন হিরণকুমারকে তীরে নামিয়া হাস্যমুখে তাঁহার সম্মুখীন্ হইতে দেখিয়া সহসা প্রমোদ একটু পিছাইয়া দাঁড়াইলেন, সহসা তাঁহার মূর্ত্তি কেমন ভিন্নভাব ধারণ করিল। প্রমোদ দেখিলেন তিনি যাহাকে আন্তরিক ঘৃণা করেন, তিনি যাহাকে শত্রু বলিয়া জানেন সেই হিরণই কনকের উদ্ধারকর্ত্তা। কি দৈব। হিরণের নিকট হইতে প্রমোদের আজ এমন উপকার গ্রহণ করিতে হইল? কনকের মৃত্যুও যে ইহা অপেক্ষা ভাল ছিল!