পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
ছিন্নমুকুল

 হিরণকুমার প্রমোদের ভাবান্তর লক্ষ্য করিলেন, তাহাতে কিছু বিস্মিত হইলেন, কিন্তু ইহার কোন কারণই খুঁজিয়া পাইলেন না। প্রথম মনোবেগ কিছু শান্ত হইলে প্রমোদ ভাবিলেন “হিরণকুমার হাজার শত্রু হইলেও কনকের প্রাণ বাঁচাইয়াছে,”—এই ভাবিয়া মনের অসন্তুষ্টি ভাব দমন করিতে চেষ্টা করিয়া হিরণকুনারকে নিতান্ত কষ্টসৃষ্টে সাধুবাদ দিয়া কনককে গৃহে লইয়া আসিলেন। প্রমোদের ব্যবহারে হিরণ সন্তুষ্ট হইলেন না।

 কনক কতনি পরে আজ প্রমোদকে দেখিয়া অতিশয় আহ্লাদিত হইল। প্রায় দুই মাসের পর বাড়ী আসিয়া কনক অনেক পরিবর্ত্তন দেখিল। দেখিল তাহার ভ্রাতার বিবাহ হইয়া গিয়াছে, তাহার একটি সঙ্গিনী জুটিয়াছে!

 সুশীলার মৃত্যুর পর প্রমোদ সমস্ত বিভবের অধিপতি হইয়া নববধূ লইয়া এখন এলাহাবাদেই আছেন। প্রমোদ কলিকাতায় আর পড়েন না, স্ত্রী এবং বিদ্যা দুই রত্নের আদর এক সময়ে হয় না, প্রমোদের এখন পড়া সাঙ্গ হইয়াছিল। সুশীলার মৃত্যুর কিছু দিন পরেই প্রমোদের বিবাহ হইয়াছিল। সুশীলার মৃত্যু এবং কনকের জলমগ্ন সংবাদ তাড়িততারে পাইবামাত্র প্রমোদ বাড়ী আসেন। অনেক অনুসন্ধান করিয়াও কনকের দেহ পর্য্যন্ত পাওয়া গেল না।এদিকে সুশীলার মৃত্যুর একমাস পরেই দয়ানন্দ কন্যা লইযা এখানে আসিয়া কন্যার বিবাহ দিয়া গেলেন। কনকের মৃত্যুসংবাদে যামিনীনাথ অত্যন্ত হতাশ হইলেন, যে লোভে নীরজাকে ছাড়িলেন তাঁহার সে লোভও ব্যর্থ হইল।

বাড়ী আসিয়া কনক নববধূ নীরজার সহিত সাক্ষাৎ করিল, অমন সুন্দরী বধূ দেখিয়াও কনকের মনে হইল “দাদার সমযোগ্য বৌ হয় নাই।”