পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
ছিন্নমুকুল

এ জনমের মত সুখ ফুরায়ে গিয়েছে সখি,
এখনো তবুও হৃদয়ে জ্বলিছে দুরাশা একি?
জানি এ অভাগী ভালে সুখ নাই কোন কালে,
দুরন্ত পিপাসা তবু থামিবার নহে দেখি।
এত যে যতন করি এ জ্বালা নিভাতে নারি,
প্রেমের এ দাবানল জ্বলি উঠে থাকি থাকি।

 গুণগুণ করিয়া বালিকা কিছু পরে থামিল। তাহার জলমগ্ন ঘটনাটি মনে পড়িয়া গেল; আজ ডুবিলে তাহাকে রক্ষা করিবার কেহই নাই, আজ আর হিবণকুমার তাহাকে বাঁচাইতে আসিবেন না। বালিকা ভাবিতে ভাবিতে সাশ্রুনেত্রে, গঙ্গাবক্ষঃস্থিত প্রাতঃসমীরণতরঙ্গিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বীচিমালা বিক্ষেপ দেখিতে লাগিল; দেখিতে দেখিতে সেই তরঙ্গস্রোত ভঙ্গ করিয়া একখানি নৌকা তীরে আসিয়া লাগিল, কনকের বিস্মিত, মুগ্ধ নেত্রের সম্মুখে সত্যই হিরণকুমার নৌকা হইতে নামিয়া তাহার নিকটে আসিয়া দাঁড়াইলেন।

 ক্ষণকাল কাহারও মুখে কোন কথা ফুটিল না। উভয়েই যেন মন্ত্রমুগ্ধ; উভয়েই যেন চিরপরিচিত অথচ উভয়েই যেন চির অপরিচিত; উভয়েরই হৃদয় পূর্ণ অথচ উভয়েরই মুখে কোন কথা নাই। কিছুক্ষণ পরে হিরণ বলিলেন “আমি এবার বেহারে যাচ্ছি, চারিটি দিন শুধু আমার হাতে তাই;—কনক তোমার দাদার সঙ্গে কি এখন দেখা হবে?”

 কনক বলিল—“দাদা ত এখানে নেই, কলকাতায় গেছেন।

 হি। কবে আসবেন?

 ক। আজই রাত্রে আসতে পারেন—নয়ত কাল।

 আবার কিছুক্ষণ উভয়ে চুপ করিয়া রহিলেন, তাহার পর সহসা আত্মহারাভাবে হিরণকুমার বলিলেন,—