পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
১৪৩

 “কনক তুমি এখানে স্নেহের রাজ্যে সুখে আছ কিন্তু আমি নিতান্তই অসুখী। তোমা ছাড়া হ'য়ে অবধি আমি সুখ হারিয়েছি, শান্তি হারিয়েছি, পৃথিবীতে আমার আর যেন কেহ নেই কিছু নেই। শয়নে স্বপনে সকল সময়েই তোমার ঐ কনক প্রতিমা বই আর কিছুই দেখিতে পাইনে, কনক তুমি আমাকে পাগল করে তুলেছ—”

 হিরণকুমার মনের আবেগে রুদ্ধশ্বাসে সমস্ত কথাগুলি বলিয়া গিয়া নিশ্বাস লইবার জন্য থামিলেন। আশ্চর্য্যের কথা কিনা জানি না, কনকের পরদুঃখকাতর কোমল মনে হিরণকুমারের এই দুঃখের কথায় দুঃখ হইল না, বরঞ্চ ইহাতে বালিকার দুঃখসিক্ত হৃদয়ে অপুর্ব্ব আনন্দ সমীরের হিল্লোল বহিল। হিবণকুমার আবার বলিলেন—“কনক এ অশান্ত মনকে কিছুতে বাঁধতে না পেরে শেষে তোমার কাছে এসেছি, আমার একটি কথার উত্তর দাও। তোমার একটি কথার উপর আমার জীবন মরণ নির্ভর করছে। কনক আমার এই উন্মত্ত ভালবাসার কি প্রতিদান পাব?”

 কনক মনে মনে বলিল—“যদি বুক চিরিয়া দেখাইবার হইত ত দেখিতে কাহার ভালবাসা বেশী উন্মত্তকর?” কিন্তু তাহার মনের কথা মনেই রহিল, মুখে ফুটিল না। হিরণ তাহার মৌনভাবে আশ্বস্ত হইয়া আবার বলিলেন—“কনক বল বল, আর সন্দেহের ব্যাকুলতায় রেখোনা। তুজি নিজে হন্তারক না হলে আমার সুখে বাধা দেবার আর কে আছে? আমি তোমার কর প্রার্থনা করলে প্রমোদের তাতে অসম্মত হবার কোন কারণই নেই। তোমার জীবন রক্ষা যে করেছে আর কিছু না হোক্ সে তাঁর কৃতজ্ঞতার ভাজন। কিন্তু তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞতা চাইনে। ভালবাসার উত্তর ভালবাসা। কনক, আমি কি তোমার ভালবাসা পাব?”

 কনক কোন উত্তর করিল না, সে ভাবিতেছিল সত্যই কি প্রমোদ