পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫০
ছিন্নমুকুল

 “দাদা অনিচ্ছায় বিবাহ করতে নেই, একি তোমার কাছেই শিক্ষা পাই নি! তুমি আজ নিজের কথার ব্যতিক্রম করবে?”

 প্রমোদ এই কথায় সিংহের ন্যায় গর্জ্জন করিয়া বলিলেন, “হাঁ আমার সেই নির্বুদ্ধিতার ফল আজ পেলেম বটে। আচ্ছা তোর বিবাহ করতে ইচ্ছা নেই, আমারও আর তোকে খাওয়াতে পরাতে ইচ্ছা নেই। তোর যা ইচ্ছা তাই কর। আমি তোর মুখ দেখতে চাই নে, দূর হয়ে যা।”

 এই খাওয়া পরার কথাগুলি বালিকার হৃদয়ে বড়ই লাগিল, কথাগুলি হৃদয়ের স্তরে স্তরে বিদ্ধ হইল। সামান্য অন্নবস্ত্রের কথা লইয়া প্রমোদ তাহাকে আজ মর্ম্ম-পীড়িত করিতে পারিলেন! বালিকা আর মনোবেগ সামলাইতে পারিল না। কষ্টে দুঃখে তাহার মস্তক আপনিই নত হইয়া পড়িল। যন্ত্রণার অনলাশ্রুতে নয়ন ভাসিতে লাগিল। তাহা দেখিয়া প্রমোদ নরম হইয়া পড়িলেন—তাঁহার মায়া হইল। প্রথম রাগের মাথায় অন্ন বস্ত্রের কথা বলিয়াই পরক্ষণেই পশ্চাত্তাপ করিতে লাগিলেন। তিনি চৌকী হইতে উঠিয়া কয়েকবার গৃহে পদশ্চারণ পূর্ব্বক কনকের কাছে আসিয়া বলিলেন,

 “কনক, আর কাঁদিস নে। আপাততঃ এখনি আর তোর বিবাহের কথা তুলব না—যা ঘরে যা।”

 কনক আস্তে আস্তে সেখান হইতে উঠিয়া গেল। প্রমোদ রাগে দুঃখে অনুতাপে মুহ্যমান হইয়া খানিকক্ষণ সেই খানেই বসিয়া রহিলেন। তাহার পর নীরজার কাছে আসিয়া মনের জ্বালা নিবারণ করিলেন।

 প্রমোদ বাহিয়ে গেলে নীরজা আবার অনেকক্ষণ ধরিয়া বিবাহের পক্ষে কনককে বুঝাইতে বসিল, শেষে নিষ্ফল হইয়া সেও বিরক্তভাবে বলিল—

 “তুই ভাই, বড় একরোকা মেয়ে; সাধে কি উনি বকেছেন? সে তোর আপন দোষের শাস্তি। নে, বাবু, যা ইচ্ছা কর; তিনি যখন