পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছেদ
১৫৩

 হিরণের পত্র পাইয়া প্রমোদের আপাদমস্তক জ্বলিয়া উঠিল, একে কিছু পূর্ব্ব হইতেই কনকের অবাধ্য আচরণে তিনি অপ্রকৃতিস্থ আছেন—তাহার পব হিরণকুমারের বিবাহ প্রস্তাবে তাঁহার ক্রোধের সীমা রহিল না। হিরণকুমার কোথাকার কে? তাহার সহিত কনকের বিবাহ! হিরণের স্পর্ধা তাঁহার অমার্জ্জনীয় বোধ হইল! এ বিবাহ হইবার নহে, ইহা তিনি তখনই স্পষ্ট করিয়া লিখিতে বসিলেন; কিন্তু কলম হাতে লইয়া মনে হইল, বিবাহ না হইবার কারণ কি দিবেন? হিরণকে কি লিখিবেন, তুমি আমার শত্রু সেই জন্য কনকের রক্ষাকারী হইলেও তাহার সহিত তোমার বিবাহ হইবার নহে। এ কথা ত আর লেখা যায় না। হাজার হৌক্‌ সে কনকের প্রাণদান দিয়াছে, তাহার পরিবর্ত্তে ভদ্রতাও ত একটা আছে। প্রমোদ কলম রাখিয়া ভৃত্যকে বলিলেন “বাবুকে বলতে বল, উত্তর কাল পাবেন।”

 প্রমোদ ইহার পর কনককে ডাকিয়া পাঠাইলেন। ভাবিলেন, এ সম্বন্ধে কনকের মতামত জিজ্ঞাসা করিলেই সে অমত প্রকাশ করিবে, হিরণকে উত্তর দেওয়া তখন তাঁহার পক্ষে খুবই সহজ হইয়া আসিবে। কনকের সহিত কথাবার্ত্তায় প্রমোদের মনে হইয়াছিল এখন বিবাহ করিতেই কনক নারাজ—নহিলে তাঁহার ইচ্ছার বিপরীতে সে কখনই কথা কহিত না। সুতরাং হিরণকুমারের প্রস্তাবও যে সে পূর্ব্ববৎ অগ্রাহ্য করিবে তাহাতে তাঁহার কিছুমাত্র সংশয় ছিল না। ইতিপূর্ব্বে রুষ্ট কথায় কনককে যে কষ্ট দিয়াছেন—এই অবসরে তাহার মনের মত কথা কহিয়া তাহাকে সন্তুষ্ট করিবার অভিপ্রায়ও মনে আঁটিলেন।

 আবার প্রমোদ কেন ডাকিয়াছেন— বালিকা ভয়ে ভয়ে তাঁহার কাছে আসিয়া দাঁড়াইল। যখন দেখিল প্রমোদের মুখে ক্রোধের লক্ষণ কিছুই নাই তখন সে নিশ্বাস ফেলিয়া বাঁচিল। প্রমোদ বলিলেন—“আয় আমার কাছের এই চৌকিতে বোস্।” কনক বসিল, প্রমোদ টেবিলের