পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৪
ছিন্নমুকুল

উপরকার কেরোসিনের ল্যাম্পটা আর একটু উজ্জ্বল করিয়া দিয়া হিরণের চিঠিখানি কনকের হাতে দিলেন। কনক বলিল “কার চিঠি?” প্রমোদ বলিলেন, “পড়্ না, ভারী মজার চিঠি? কি উত্তর দেব তুই বলে দে।”

 কনক চিঠি খুলিল, খুলিয়া প্রথমেই দেখিতে গেল কে লিথিয়াছে; দেখিল হিরণকুমারের পত্র। বুঝিল তিনি কি লিখিয়াছেন,—তাহার আর পড়া হইল না; আপনাআপনি হাতটি নীচু হইয়া পড়িল,—মুখ আরক্তিম হইয়া উঠিল, বিন্দু বিন্দু ঘর্ম্ম ওষ্ঠে ভালে পদ্মপত্রে নীহারবৎ শোভিত হইল, বালিকা মৌনভাবে আনত দৃষ্টিতে পত্র হস্তে ধরিয়া বসিয়া রহিল।

 প্রমোদ তাহার ভাব দেখিয়া হাসিয়া বলিলেন, “ভয় নেই আমি আর তোকে বিয়ে করতে বলছি নে। চিঠিখানা যে পড়তে দিলুম সে কেবল তোর জাঁকটা বাড়াতে। কত লোকে যেচে বর পায় না আর আপনা হতেই তোর কত বর জুটছে! তা নিজের গুমর নিজে ত তুই বুঝলি নে—এক লাইন না পড়তে পড়তে ভড়কে গেলি। দে চিঠিখানা—জবাব লিথে দিই।” বলিয়া চিঠিখানি কনকের হাত হইতে লইয়া উত্তর লিখিতে বসিলেন—

 কনক সহসা আগ্রহের স্বরে বলিয়া উঠিল, “কিন্তু”—প্রমোদ ইহাতে মুখ তুলিয়া বলিলেন—“ন। এবার আর তোর ভাবনা নেই। লিখছি, তোকে বিয়ের প্রস্তাব করা বৃথা, তোর বিয়ে করতে ইচ্ছা নেই। কেমন সন্তুষ্ট কি না?”

 এই কথায় কনককে যেরূপ হর্ষোৎফুল্ল দেখিবেন আশা করিয়াছিলেন— সেরূপ দেখিতে পাইলেন না। তাঁহার কথায় সে যেন অধিকতর বিষণ্ন গম্ভীর হইয়া পড়িল, চক্ষু দুটি সজল হইয়া উঠিল, কিন্তু নয়নের জল নয়নেই আবার মিলাইয়া পড়িল, ভূমিতে পড়িল না।

 প্রমোদ-আশ্চর্য্য হইয়া বলিলেন, “একি তুই এমন বিষণ্ন হয়ে পড়লি? এখন ত আর আমি তোকে অমতে বিয়ে করতে বলছি নে।”