পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রয়ন্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
১৫৯

 কনক দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া নীরবে ঘাড় নাড়িয়া জানাইল—“না।”

 হিরণকুমার ভগ্ন হৃদয়ে বলিলেন,

 “তুমি আমার মত আমাকে পেতে ব্যগ্র নও বলেই ওরূপ বলছ, আমার মত ভালবাস না বলেই ওরূপ বলছ। তোমাকে না পেলে আমার চির জীবনের সুখ বিনষ্ট হবে জেনেও, তোমার দাদার একটু মনঃক্ষোভের ভয়ে তুমি আমাকে বলিদান দিতেও প্রস্তুত। কনক আমি যদি তোমার ভাই হতুম তা হ'লে এই স্বর্গীয় ভালবাসা আমার হ’ত!”

 হিরণের প্রত্যেক কথা গুলি তাহার হৃদয়ে বিদ্ধ হইল। কনক হিরণকে তেমন ভাল বাসে না, কেমন করিয়া হিরণকুমার এ কথা বলিলেন! কনকের কাহার জন্য তবে এত কষ্ট? কাহার জন্য এত জ্বালা? কাহাকে হৃদয় দিয়াছে বলিয়া ভ্রাতার কথায় অসম্মত, ভ্রাতার সহিত এরূপ মনোবিচ্ছেদ! ভ্রাতার অমতে কেবল কনক বিবাহ করিতে চাহে না বলিয়াই কি হিরণের এইরূপ মনে করা ঠিক! তাঁহার সহিত বিবাহ না হইলে যে কনক চিরকাল জীবন্তে মরিয়া থাকিবে হিরণকুমারের কি এই জ্ঞানটুকুও নাই? কিন্তু কনকের যতই কষ্ট হউক না, কর্ত্তব্যের বিপরীত কাজ কি করিয়া করিবে? ভ্রাতৃস্নেহ হইতে কনকের প্রণয় যতই বলবৎ হউক না, ভ্রাতার অমতে কাজ করিয়া ভ্রাতাকে কষ্ট দিবে কি করিয়া? হিরণ কেন এইটুকু বুঝিলেন না?

 হিরণ তুমি বড় নিষ্ঠুর! বালিকার এই দগ্ধ হৃদয়ে আরও জ্বালা দিলে। কনক যদি দেখাইতে পারিত তো দেখিতে, তুমি তাহাকে যত ভালবাস তাহা হইতেও সে তোমাকে অধিক ভালবাসে কি না। কিন্তু কনক বালিকা, কথা কহিতে জানে না, প্রকাশে অক্ষম, তাই তুমি আজ ও কথা বলিয়া তাহাকে যাতনা দিতে পারিলে!

 হিরণ আবার বলিলেন, “তবে কনক, আমি যাই, আজ অবধি সকল সুখে বিসর্জন দিতে যাই, তোমার জন্যই সকল জলাঞ্জলি দিব। আর