পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
ছিন্নমুকুল

না। মনে ছিল বক্সিসটা কিছু এমন মারবো যে এর পর যাবজ্জীবন বসে খেতে পারব, আর চাকরী করতে হবে না। ওমা তাতেও বাবু নমো নমো ক’রে সারলে। আবার বলে কিনা খুন কর! আমি বেটা ফাঁসিতে ঝুলি আর উনি পায়ের উপর পা রেখে গুড়ুক ফুঁকুন! এমন চাকরীর পায়ে গড়! জানলেন মশায় তাই রাগের মাথায় দুট বেফাঁস কথা কয়ে ফেলেছিলুম! তার জন্যে এমন গোঁ! বলব কি মশায়, বেটার শরীরে ধর্ম্মজ্ঞান এক ফোঁটা নেই! তা আমিও এবার ছাড়ছি নে!

 বলিতে বলিতে প্রতিশোধ স্পৃহায় সে জ্বলিয়া উঠিল। হিরণ বলিলেন, “কিন্তু বাবু তোমার কি শাস্তিটা করেছেন?”

 উ। সে কথা আর কন্ কেন? মিথ্যা চুরির দাবিতে আমাকে জেলে দেবার ফন্দি। কি করি প্রাণের দায়ে মাসির কাছে এসে লুকিয়ে আছি। মেসো আমার ছিল ভাল, বাবুদের দোকানে জুতোর কাজ করে দিব্যি দু’ পয়সা রোজগার করত; এখন মেসো মরেছে, মাসী পৈরাগবাসী হয়েছে। ছেলেপিলে নেই দু’ দশ পয়সা যা আছে আমিই পাব। এখন এ দায়টা থেকে ছাড়ান পেলেই বাঁচি।

 ভৃত্যের কথায় হিরণকুমারের সম্পূর্ণ বিশ্বাস জন্মিল। তাঁহার সহসা নূতন আশার সঞ্চার হইল। তিনি বলিলেন, আজ থেকে রামধন, তুমি আমার চাকর বাহাল হলে, তোমার শোধ তোলার ভার আমি হাতে নিলুম। এখনি আমার সঙ্গে কলকাতায় চল।”

 হিরণকুমার যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হইয়া লইয়া, ভৃত্যের সহিত একটা ঠিকা গাড়িতে উঠিয়া গাড়ী হাঁকাইয়া ষ্টেসনে লইয়া যাইতে হুকুম দিলেন। কাল তাঁহার কর্ম্ম স্থলে যাত্রা করিবার কথা কিন্তু এই জীবনমৃত্যু বিপাকে সে কর্ত্তব্য ভুলিয়া তাহার ত্রুটিতে যে ক্ষতি হইতে পারে, তাহাও গণনার মধ্যে না আনিয়া তিনি কলিকাতা যাত্রা করিতে অধীর