পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৮
ছিন্নমুকুল

জন্যই এ সকল আয়োজন!—নীরজার আহ্লাদ দেখে কে? তাহার ঈষৎ দর্পপূর্ণ পদনিক্ষেপ, তাহার ওষ্ঠাধরের বিকশিতভাব, তাহার চক্ষুর কটাক্ষ-আস্ফালন, সকলই তাহার উল্লাসভাবের সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে।

 বেলা দ্বিপ্রহরে নীরজা বোটে উঠিতে যাইবার সময় সিঁড়িতে নামিতে নামিতে হস্তের পানের ডিবা দাসীকে দিয়া বলিল,

 “যাদি, কনক, কি করছেরে?”

 বোধ হয় কনককে একাকী রাখিয়া যাইতে নীরজার এক একবার মন কেমন করিতেছিল। নীরজা হৃদয়ের অন্তরতল পর্য্যন্ত খুঁজিয়া দেখিলে হয়তো দেখিতে পাইত যে, সে এখনও কনককে একটু একটু ভালবাসে, নহিলে তাহার জন্য অতটুকু কষ্টই বা হইবে কেন? নীরজার অনেকবারই মনে হইতে লাগিল, আহা কনক যদি আগেকার মতই থাকিত, না বদলাইয়া যাইত তো বেশ হইত! নীরজার কথায় দাসী বলিল, “দিদিঠাকরুণ বারাণ্ডায় দাঁড়িয়ে জিনিষপত্র তোলা দেখছেন; আহা! বৌঠাকরুণ, তাঁকে সঙ্গে নিলেনা কেন গা? আহা তাঁর মুখটি শুকিয়ে গেছে।”

 শুনিয়া নীরজার একটু মমতা হইল। দাসী আবার বলিল, “দেখ বৌঠাকরুণ, দিদিঠাকরুণ দিনকের্ দিন শুকিয়ে যাচ্ছেন, তাই পাড়ার অনেকে অনেক কথা বলে।”

 নী। কি বলে।

 দাসী। বলে,—ওমা, অমন লক্ষ্মী বোনটি, যেমন রূপে তেমনি গুণে, মুখে যেন কথাটি নেই; তা ভাইটা বুঝি কষ্ট দেয়, নইলে অমন শুকিয়ে যাচ্ছে কেন? ভাইটা ছেলেবেলা হতে বড় দুরন্ত।

 শুনিয়া নীরজা জ্বলিয়া গেল। কনকের জন্য প্রমোদের এত জ্বালা,