পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ
১৮১

বৃদ্ধি হয়। না, কনক আমি আর তোমাকে ভুলিতেও চেষ্টা করিব না— তুমি আমার হৃদয়সর্ব্বস্ব, তুমি আমার দেবতা, তোমাকে পাইলাম না বলিয়া তোমাকে ভুলিব! আমার কনককে ভুলিব! চিরজীবন কষ্টে কাটুক, হৃদয় চিরজীবন যন্ত্রণায় দহিতে থাকুক, তবুও কনক তোমাকে ভুলিব না, মনে মনে আজীবন তোমাকে পূজা করিয়া কাটাইব, —ঐ মধুর প্রতিমাখানি ধ্যান করিয়াই জীবন কাটাইব!

 কনক! আমি যে দিন হইতে তোমাকে দেখিয়াছি সেই দিন হইতে এ হৃদয় তোমার মূর্ত্তিতেই পূর্ণ রহিয়াছে, সেই দিন হইতে পৃথিবীর অন্য সকল সুখেই জলাঞ্জলি দিয়াছি, কেমন করিয়া সেই হৃদয়াঙ্কিত কনককে আজ আমি ভুলিব! একদিন আশা ছিল তোমাকে পাইয়া সুখী হইব, সে আশা আর নাই, তবে আমি আর কোন আশায় এখানে থাকিব! আমি চলিলাম, ঐ প্রতিমাখানি হৃদয়ে ধরিয়া চিরজীবনের সুখশান্তি বিসর্জ্জন দিয়া দেশান্তরে চলিলাম। কনক, অভাগা হিরণের একমাত্র এই বাসনা—একমাত্র এই প্রার্থনা, তুমি সুখে থাক!

জীবনে মরণে তোমারি।” 


 চিঠি পড়া শেষ হইলে কনক ভাবিতে লাগিল—“কনক অভাগিনী, কনক চিরদুঃখিনী। ভ্রাতার জন্য কনক চিরসুখ ত্যাগ করিল, ভাই তবুও কনককে ভালবাসিলেন না। প্রাণের হিরণ— হৃদয়সর্ব্বস্ব হিরণ তিনিও আর কনককে ভালবাসেন না, নহিলে কেমন করিয়া তাহাকে ত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইতেছেন! কনককে এই ঘোর যন্ত্রণাসমুদ্রে ভাসাইয়া কেমন করিয়া হিরণ তাহার সহিত চিরসম্বন্ধ লোপ করিবার কথা মনে আনিলেন! তাহাকে এইরূপে বিসর্জ্জন দিয়া না যাইলে তবু কালে তাহাদের মিলন-আশা থাকিত, তাহার ভ্রাতার কি ভ্রম আর কখনই ঘুচিত না? ঘুচুক না ঘুচুক সেই দূরকল্পিত আশাতেই কি তাহারা ধৈর্য্য ধরিয়া থাকিতে পারিত না? হিরণ কনককে তেমন ভালবাসেন