পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৮
ছিন্নমুকুল

কিন্তু একে সেই বৃষ্টিধারাযুক্ত বাতাসের প্রবল বেগ তাহাতে আবার উন্মূলিত বৃক্ষশাখা প্রভৃতি প্রতিপদে তাঁহার গমনে বাধা দিতে লাগিল। তিনি সত্বর অগ্রসর হইতে না পারিয়া মূর্চ্ছাপন্ন নীরজাকে লইয়া অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়া পড়িলেন। সহসা কিছু দূরে বৃক্ষের অন্তরালে ক্ষীণদীপালোক দৃষ্ট হইল, আশার আশ্বাসে বৃক্ষ কণ্টকাদির আঘাতে ভ্রূক্ষেপ না করিয়া, দ্রুতপদে তিনি সেই দিকে চলিতে লাগিলেন। কিছু দূর আসিলে সেই আলোটিও চক্ষুর অগোচর হইল; তাঁহার হৃদয় কাঁপিয়া উঠিল। নীরজাকে লইয়া তিনি কোথায় যান! বৃক্ষতলে দাঁড়াইবার যো নাই, প্রতিক্ষণে ঝড়ের বেগে শাখা ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে! তিনি নিরাশচিত্তে মুহূর্ত্তকাল কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় ভাবে দাঁড়াইয়া পড়িলেন, সহসা সেই ঝড় বৃষ্টি-গর্জ্জনের মধ্যে কোন মনুষ্যের কাতরচীৎকার তাহার কর্ণে প্রবিষ্ট হইল। সেই সময় বিদ্যুতালোকে তিনি দেখিলেন, এক জন মনুষ্য তাঁহার নিকট দিয়া অতি দ্রুতবেগে পলায়ন করিল। আর একবার বিদ্যুৎ হানিল, তিনি দেখিতে পাইলেন, তাঁহার সম্মুখে কিছু দূরে এক ধবলাকার পদার্থ। কোন ভগ্ন অটালিকা হইবে—এই আশা করিয়া সেই দিকে আসিলেন, কিন্তু সেখানে আসিয়া বিদ্যুতালোকে যাহা দেখিলেন, তাহাতে স্তম্ভিত হইয়া পড়িলেন। দেখিলেন একজন মৃতপ্রায় মনুষ্য কষ্টব্যঞ্জক অস্ফুট আর্ত্তনাদ করিতেছে।

 প্রমোদ বুঝিলেন, কিছুক্ষণ পূর্ব্বে তাহারই চীৎকার তিনি শুনিতে পাইয়াছিলেন। এবং যে ব্যক্তিকে তাহার নিকট দিয়া পলায়ন করিতে দেখিলেন, ভাবিলেন, সেই ইহাকে আহত করিয়া গিয়াছে।

 মূর্চ্ছাপন্ন নীরজা তাঁহার বক্ষে, আর আহত মুমূর্ষ ব্যক্তি তাঁহার সম্মুখে হয়তো যত্ন করিলে সে এখনো বাঁচিতে পারে, প্রমোদ যে কি করিবেন ভাবিয়া পাইলেন না। এই সময় আর এক ব্যক্তি তাঁহার নিকট আসিয়া