পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৪
ছিন্নমুকুল

অনুসন্ধান করিবেন স্থির করিলেন। এই সময় একজন বৃদ্ধা এই কুটিরে আসিয়া উপস্থিত হইল। বৃদ্ধা সেই ভূতোর মাসী। কিছু দূরে পরপারে দেবদর্শনে গিয়াছিল, পথে ঝড় বৃষ্টি পাইয়া ভিজিতে ভিজিতে গৃহে ফিরিল। এখানে অনেক লোকজন দেখিয়া প্রথমে বিস্মিত হইল, কিন্তু ইহারা ঝড় বৃষ্টিতে এই কুটিরে আশ্রয় লইয়াছেন শুনিয়া তখন আশ্বস্তভাবে আস্তে আস্তে অগ্নির নিকট বসিয়া হস্তপদ সেঁকিতে সেঁকিতে অর্দ্ধেক আপনমনে অর্দ্ধেক প্রকাশ্যে বলিল,

 “তা বাপু বেশ—এই ঝড় বৃষ্টি—এ সময়ে কি পথ চলা যায় বাপু! তোমরা এসেছ বেশ করেছ—বাবা, কি এক্ রোখা মেয়ে গা?”

 নীরজা ভাবিল, বৃদ্ধা তাহাকে ভাবিয়াই বলিতেছে, ঈষৎ ক্রুদ্ধ, এবং অপ্রস্তুত ভাবে সে বলিল,”কেন, বাপু, আমি কি করেছি, আমাকে কিসে এক রোখা দেখলে?

 বৃদ্ধা। তুমি কেন গো? আজ এই দুর্য্যোগের সময় নৌকা থেকে কত কষ্টে বেঁচে যখন নদীব ধার দিয়ে বাড়ী আসছি, তখন দেখি একটি কাদের মেয়ে—ৎ আহা! এমন সুন্দর মেয়ে, কেউ কখনো দেখেনি— একেবারে যেন উন্মত্ত হয়ে ছুটে ছুটে বেড়াচ্চে। আহা! একরাশি চুল সব এলোথেলো, বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে সব সোটা সোটা হয়ে পড়েছে, তা দিয়ে আবার ঝর ঝর জল ঝরছে।

 প্রমোদ ও নীরজা দুজনেই একত্রে বলিয়া উঠিলেন, “আহা! কাদের মেয়ে গা?”

 বৃদ্ধা। ওগো, কাদের মেয়ে জানিনা, কেবল গান গায়। আমি শোধালাম, ‘তুমি কাকে খুঁজছ গা?” তা সে বল্লে,

“হিরণ হিরণ সোণার বরণ,
যাঁরি হাতে বাঁচন মরণ।”