পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
ছিন্নমুকুল

বালিকা মন্দিরাভিমুখে গমন করিল। যুবা স্তম্ভিতভাবে সেইখানে দাঁড়াইয়া গমনশীল বালিকার প্রতি চাহিয়া রহিলেন। বালিকা দালানে আসিয়া সুষুপ্ত প্রমোদের শিয়রে আসিয়া দাঁড়াইল—দেখিল, প্রমোদের ওষ্ঠাধরে ঈষৎ হাসির রেখা, ঈষদ্ভিন্ন পল্লবযুক্ত নয়নদ্বয় ঈষৎ আবেশময়। বালিকা দেখিল প্রমোদ কোন সুখ-স্বপ্ন দেখিতেছেন। সত্যই প্রমোদ স্বপ্ন দেখিতেছিলেন—যেন আকাশ হইতে একটি জ্যোতির্ম্ময়ী রমণী নামিয়া তাঁহার শিয়রে দাঁড়াইলেন— তিনি আহ্লাদে উৎফুল্ল হইয়া তাহাকে ধরিতে হাত বাড়াইবা মাত্র সে মূর্ত্তি অন্তর্হিত হইল। প্রমোদ জাগিয়া দেখিলেন—সত্যই তাঁহার মস্তকের নিকট সেই দেবীমূর্ত্তি। দুজনে মুগ্ধ নয়নে দুজনের প্রতি চাহিয়া রহিলেন, যামিনীনাথ যে কখন গৃহে প্রবেশ করিলেন—জানিতেও পারিলেন না। যামিনী আসিয়া দেখিলেন, প্রমোদের প্রতি রমণীর সে দৃষ্টি কি স্নেহময়, কি মধুময়! যামিনীর হৃদয়ে ঈর্ষার অনল জ্বলিল। প্রমোদ যামিনীকে দেখিয়া চমকিতভাবে উঠিয়া বসিলেন। বালিকারও এতক্ষণে কথা ফুটিল।

 সে বলিল “আপনারা কি নদীতে স্নান করবেন? কিন্তু আপনাদের মত কাপড় দিতে পারব না ত? বাবার গেরুয়া বস্ত্র আছে।”

 তখন প্রমোদ শয্যা হইতে উঠিয়া দাঁড়াইয়া সবিনয়ে বলিলেন, “এখন সকাল হয়েছে, আমরা স্বচ্ছন্দে পথ চিনে বাড়ী যেতে পারব। আপনাকে কাল কত কষ্ট দিয়েছি, কিছু মনে করবেন না। আপনি আশ্রয় না দিলে আমাদের যে কাল কি দুর্দ্দশা হোত তার ঠিক নেই, চিরকাল আপনার আতিথ্য আমাদের মনে থাকবে।”

 রমণী ঈষৎ লজ্জিতভাবে বলিল “অতিথি সৎকারে কষ্ট কি? পিতার সেবায় যেমন আনন্দ—অতিথি সৎকারেও তেমনি আনন্দ। আপনারা আহারাদি করে যান না?”