পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উপসংহার
১৯৯

উপসংহার

 আরও কয়েক বৎসর অতীত হইয়াছে। এই অল্পকালের মধ্যেই ধ্বংসশীল জগতের ক্ষতিগ্রস্ত ভাগ কত পূরিয়া উঠিয়াছে। কত মরু কত শ্মশান শ্যামলক্ষেত্রে পরিণত হইয়াছে, কত শুষ্ক নদনদী জলে ভরিয়া উঠিয়াছে। এই অল্পকালের মধ্যেই কত দরিদ্র ধনবান হইয়াছে, কত পলাতক রাজা আবার আপন রাজ্যে অধিবেশন করিয়াছেন। কত মাতার পুত্রশোক লাঘব হইয়া আসিয়াছে; কত বন্ধু বন্ধুর শোক ভুলিয়াছেন, কত পত্নীব্রতস্বামী যাঁহারা একদিন স্ত্রীর নিকট শপথ করিয়া বলিয়াছিলেন, স্ত্রীর মৃত্যু হইলে নিশ্চয়ই তাঁহাদেরও প্রাণবিয়োগ হইবে, তাঁহারা আবার দ্বিতীয়বার দারগ্রহণ করিয়া সুখে সংসার নির্ব্বাহ করিতেছেন। প্রমোদও এই অল্পকাল মধ্যে কনককে ভুলিয়াছেন, কেবল মাঝে মাঝে স্বপ্নের ন্যায় কখনও কখনও কনকের কথা তাঁহার স্মৃতিপথে উদিত হয়। প্রমোদের এখন একটি কন্যা ও একটি পুত্র। তাহাদের দেখিয়া কোনও কোনও সময়ে প্রমোদের শৈশবকাল মনে পড়ে, একআধবার কনককে মনে পড়িয়া একটু কষ্ট হয়, কিন্তু আবার নীরজার মুখের দিকে চাহিলেই সকল ভুলিয়া যান।

 কনকের মৃত্যুর পর হইতে হিরণের উপর আর প্রমোদের বিদ্বেষ ভাব রহিল না; হিরণের তিনি বিশেষ বন্ধু হইয়া পড়িলেন, হৃদয়ের সহিত তাঁহার সমদুঃখী হইলেন। কিন্তু কিছুকাল পূর্ব্বে যে ব্যক্তির বিন্দুমাত্র দয়া পাইলেও হিরণ চিবসুখী হইতে পারিতেন, এখন তাঁহার নিকট হইতে সহস্র মমতা পাইয়াও তাঁহার দুঃখের ভার কিছুমাত্র কমিল না। অনেক ক্ষতি কালে পূরণ হয় বটে, কিন্তু