পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
২১

উভয়ের মনে মনে চিন্তাস্রোত বহিয়া যাইতেছে, কিন্তু কেহই কাহারও নিকট আপন মনোভাব প্রকাশ করিতেছেন না, একজন ভাব-প্রকাশ বিষয়ে যেন সম্পূর্ণ উদাসীন, আর একজন সে বিষয়ে সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক।

 এইরূপেই প্রায় সে দিনটি কাটিল। দু’একটি সামান্য কথা ছাড়া তাঁহাদের কোন কথাই আর হইল না। দু’জনের কেহই পূর্ব্বদিনকার কথা তুলিলেন না। অপরাহ্নে যামিনীনাথ বাহিরে গেলেন। আগামী কল্যই তাঁহাদের কানপুর ছাড়িবার কথা— তাহার আগে কানপুরের আলাপী বন্ধুদিগের সহিত একবার দেখা সাক্ষাৎ করা উচিত; কিন্তু প্রমোদকে আজ ইহাতে নিতান্ত অনিচ্ছুক দেখিয়া অবশেষে যামিনীনাথ একাকীই গমন করিলেন। প্রমোদ নিঃসঙ্গ হইয়া ক্ষণকাল পাঠে মন দিতে চেষ্টা করিলেন; কিন্তু তাহাতেও অকৃতকার্য্য হইয়া—চিন্তাভারাক্রান্ত মনকে শান্তি দান করিতেই যেন, সুদৃশ্য ভাগীরথীর তীরে আগমন করিলেন। সেখানে আসিয়া দেখিলেন— পরপারেই সেই অরণ্য। সেই বনদেবীর বাসস্থান। পূর্ব্বদিনের স্মৃতি জ্বলন্তভাবে তাঁহাকে অভিভূত করিয়া ফেলিল। ভাবিতে ভাবিতে তিনি যে পুনরায় সেই অরণ্যের দিকেই চলিতেছেন—তাহা নিজেই বুঝিতে পারিলেন না। অজ্ঞাত তাড়িতশক্তির প্রভাবেই যেন পদে পদে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। অরণ্যে আসিয়া তাঁহার চমক ভাঙ্গিল,—কিন্তু তখন আর ফিরিয়া যাইতে পা উঠিল না—ভাবিলেন সন্ন্যাসীর সহিত একবার দেখা করিয়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিয়া আসিলে হয় না। পূর্ব্বরাত্রে যে পথ দিয়া মন্দিরে গিয়াছিলেন, প্রবল ইচ্ছার বশবর্ত্তী হইয়া সেই পথ ধরিলেন। কিন্তু দূর হইতে মন্দিরচুড়া যখন নজরে পড়িল তখন সহসা কেমন একটা লজ্জার ভাবে, সঙ্কোচের ভাবে, তিনি সেইখানেই বন্ধপদ হইয়া দাঁড়াইয়া