পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
২৫

 বা। না ওটি আমি তৈরি করেছি। আমি যাত্রীদের কাছে গান শিখি—বাবার কাছে শিখি—কেতাবের গানের সুর জানিনে, কিন্তু যেটা ভাল লাগে একটা যে কোন সুর তাতে বসিয়ে নিই, আর নিজে কথা তৈরি করে তাতে সুর দিয়ে গাই—সব চেয়ে সেই গান গাইতে আমার বেশী আনন্দ হয়।

 প্র। আপনি নিজে গান রচনা করেন? যে গানটি গাইলেন ওকি আপনার রচনা? আর একবার গাবেন কি?

 বালিকা পূর্ণকণ্ঠে গানটি আবার গাহিতে লাগিল।

 প্রমোদের শরীর হর্ষবিহ্বল ও রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিল, প্রমোদ ভাবিলেন “এই অরণ্যটিই কেন সমস্ত পৃথিবী হইল না? এই দুইটি জীবন বই আর পৃথিবীতে জীবন রহিল কেন?” সহসা পশ্চাৎ দিকে কাহার পদশব্দে তাঁহার সে চিন্তা ভঙ্গ হইল, তিনি মুখ ফিরাইয়া দেখিলেন—একজন সন্ন্যাসী। নীরজার তখন গান শেষ হইয়াছিল, সন্ন্যাসী ঈষৎ তীব্র স্বরে বলিলেন “নীরজা, তোমাকে কতক্ষণ ধরে ডাকছি? আহারের সময় হয়েছে, এস কুটীরে এস —?” প্রমোদ লজ্জায় জড়সড় হইয়া পড়িলেন, নীরজাও কিঞ্চিৎ অপ্রতিভ হইল। কিন্তু নীরজা বনবালা, তাহার সে ভাব অধিকক্ষণ রহিল না, সরল ভাবে পিতাকে বলিল “কে জানে কেমন অন্যমনে ছিলাম—আপনার ডাক আজ শুনতেই পাইনি; অনেকক্ষণ ধরে ডাকছেন কি?” কন্যার কাতর ভাবে সন্ন্যাসী স্বাভাবিক নরম স্বরে বলিলেন “না, আমি বেশীক্ষণ ডাকি নাই; ও যুবাটি কে?”

 নীরজা বলিল “সেই যে সেদিন পথহারা হয়ে দুজন পথিক এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, যাঁদের কথা আমি আপনাকে বলেছিলুম, ইনি তাঁদেরি মধ্যে একজন। নাম প্রমোদ; আপনার সঙ্গে দেখা করতে ইনি মন্দিরে যাচ্ছেন।”