পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
ছিন্নমুকুল

 তখন প্রমোদ বলিলেন “মহাশয়, ইনিই সেদিন বনদেবীরূপে আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, সেজন্য আমরা চিরঋণী। এই জঙ্গল মধ্যে আমরা সেদিন কি বিপদেই পড়েছিলেম।

 সন্নাসী বলিলেন “নীরজা সন্ন্যাসীকন্যা, অতিথি সৎকারই উহার ধর্ম্ম। নীরজা কর্ত্তব্য কাজ করেছে, সেজন্য তোমরা কেন ঋণী হবে? সে যাই হ’ক, আজও কি শীকার অভিপ্রায়ে আসা হয়েছিল?”

 প্রমোদ একটু লজ্জিতভাবে ইতস্ততঃ করিয়া বলিলেন “না, আজ বেড়াতেই এসেছি।”

 স। আজও রাত হয়ে পড়েছে, কুটীরে থাকলে হয় না?

 এই কথায় নীরজা ব্যগ্রভাবে প্রমোদকে বলিল “চলুন তবে কুটীরেই চলুন, এত রাতে কি করে বাড়ী যাবেন?”

 কিন্তু প্রমোদ ইহাতে অসম্মত হইলেন, ভাবিলেন তাহা হইলে যামিনীনাথ বড়ই চিন্তিত হইবেন, সমস্ত রাত্রি তাঁহার অন্বেষণ করিবেন। সন্ন্যাসী বলিলেন “কিন্তু এত রাতে তোমাকে অনাহারে আমি ছেড়ে দিতে পারি না; তা’হলে আমার ব্রত ভঙ্গ হয়, অতিথি-সৎকারই আমার ব্রত।” এই কথায় তখন প্রমোদ আর কিছু না বলিয়া সন্ন্যাসীর সহিত মন্দিরাভিমুখে গমন করিলেন। নীরজা প্রফুল্লচিত্ত বিহঙ্গীর ন্যায় আগে আগে যাইতে যাইতে গান ধরিল—

আয় আয় আয়, কে আছিস তোরা,
মরমব্যথায় যার,
দিবস রজনী পড়িছে বিফলে
নয়ন-সলিল ধার;
কাতর হৃদয়ে কাঁদিছে যেজন
হারায়ে বিভব মান,