পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
২৯

বুঝিতে পারিলেন না। প্রমোদ বলিলেন, “তা যেতে পারি হরিদ্বার কতই বা দূর!”

 নী। বাবা ত বল্লেন সে অনেক দূর—অতদূর কি আপনি যাবেন?

 প্রমোদ প্রত্যুত্তরে একটু হাসিলেন, সন্ন্যাসী ওকথা বন্ধ করিবার জন্য বলিলেন “নীরজ, তোকে রেখে কি আর আমি হরিদ্বার যাব? তোর আগে বিবাহ হ’ক। কিন্তু তাহ’লেই কি যেতে পারব? উঃ মায়ার কি প্রচণ্ড পীড়ন, জানছি কিছুই কিছু না, জানছি সেই পরব্রহ্ম বই আর গতি নাই, দিনও প্রায় অবসান হ’য়ে এল, তথাপি

‘মমতাবর্ত্তে মোহগর্ত্তে নিপাতিতাঃ।
মহামায়াপ্রভাবেন সংসারস্থিতিকারিণ॥

সন্ন্যাসী চক্ষু নিমীলিত করিলেন, দুই এক বিন্দু অশ্রুবারি তাঁহার গণ্ড বাহিয়া পড়িল। কিছুক্ষণ এইরূপে অতিবাহিত হইবার পর, প্রমোদ বাড়ী যাইবার নিমিত্ত বিদায় প্রার্থনা করিলেন। তখন সন্ন্যাসী, স্বয়ং পথপ্রদর্শক হইবার ইচ্ছায় উঠিলেন। নীরজা সঙ্গে আসিতে চাহিল, কিন্তু সন্ন্যাসী নিষেধ করিয়া বলিলেন “কাল প্রাতে আমি আবার নৈমিষারণ্যে যাব, তোমার খুব রাত থাকতে উঠতে হবে, শুতে আর বিলম্ব করো না।” নীরজা ইহাতে কিছু ক্ষুণ্ণ হইল, কিন্তু পিতার কথায় বিরক্ত না হইয়া শয়ন করিতে গমন করিল।

 প্রমোদ বাড়ী আসিয়া দেখিলেন, যামিনীনাথ সেখানে নাই, ভৃত্যের নিকট শুনিলেন, অপরাহ্নে কলিকাতার এক পত্র পাইয়া বিশেষ প্রয়োজনবশতঃ সেই রাত্রেই তাঁহাকে কলিকাতায় যাইতে হইয়াছে।

 একাকী সেখানে, সে রাত্রি কাটাইয়া পরদিন প্রমোদও প্রয়াগ যাত্রা করিলেন।