পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
ছিন্নমুকুল

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

কনকলতা

 এইখানে আমরা কনকের কথা কিছু বলিতে প্রবৃত্ত হইলাম। কনক এখন পঞ্চদশবর্ষীয়া, কিন্তু তাহার এখনো বিবাহ হয় নাই। সুশীলা ও প্রমোদ দুজনেরই বাল্যবিবাহে বিশেষ ঘৃণা বলিয়া কনকের এখনো তাঁহারা বিবাহ দেন নাই। কনক স্নেহময়ী প্রতিমা। তাহার ক্ষুদ্র হৃদয়খানির সমস্তই ভালবাসায় পূর্ণ। সুশীলাকে সে মাতার মতই ভাল বাসে— আর তাহার ভাইটিকে? কোন প্রণয়িনী বুঝি তাহার প্রণয়ীকেও এত ভালবাসিতে পারে না। যদি সম্ভব হইত তবে প্রমোদের পায়ে ধূলা লাগিতে না দিয়া মাটীতে সে বুক পাতিয়া রাখিত।

 যতদিন প্রমোদ কলিকাতায় থাকিতেন, ততদিন অত্যন্ত কষ্টে কনকের দিন কাটিত, সে কেবল দিন গণিত করে ছুটীতে তিনি বাড়ী আসিবেন; এবং ইহার মধ্যে ভ্রাতার জন্য মোজা গলাবন্ধ কতই বুনিয়া রাখিত। ভাইটি আসিলে কি করিয়া তাহাকে আদর যত্ন করিবে, কি গল্প করিবে, কি ভাষায় তাহার বিরহদুঃখ প্রকাশ করিবে; এই সমস্ত বিষয় লইয়া কতই ভাবিত, কতই না কল্পনা করিত! কিন্তু অনেক কল্পনাই তাহার মনের মধ্যে সৃষ্ট হইয়া মনের মধ্যেই লয় পাইয়া যাইত;—মুখ ফুটিয়া কোন আদরের কথা, ভালবাসার কথা ব্যক্ত করিতে সে লজ্জিত হইত, সাহসেও কুলাইত না—হাজার ইচ্ছা হইলেও সে তাহা পারিত না। তবে, কনকের সকল কার্য্যেই, একটি সাধারণ ক্ষুদ্র কথাতেও তাহার মনের প্রগাঢ় স্নেহভাব প্রকাশ পাইত। কনক সর্ব্বদাই প্রমোদকে পত্র লিখিত,