পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
ছিন্নমুকুল

ভাব নাই, তিনি ঈষৎ বিষণ্ণ, কথা ধীর অথচ দৃঢ়তাব্যঞ্জক। কথা কহিতে কহিতে প্রমোদ অন্যমনে সেই সেল্‌ফের এক একখানি বই লইয়া টেবিলে ফেলিতে লাগিলেন, কনক অন্যমনস্কতা বশতঃ তাহা দেখিল না; দুঃখিত ভাবে প্রমোদকে বলিল, “তুমি দাদা আমাকে কোন কথাই বলতে চাও না।” কনকের মুখখানি ম্লান হইল, চোখ দু’টি ছল ছল করিয়া আসিল। প্রমোদ কনকের কথায় নিরুত্তর হইয়া রহিলেন, তাহার কথা শুনিতে পাইলেন কি না তাহাও বোঝা গেল না। ক্ষণকাল মৌনভাবে থাকিয়া প্রমোদ সে গৃহ হইতে প্রস্থান করিলেন। তাহাতে কনকের বড় দুঃখ হইল, কনকের কান্না আসিল, কাঁদিয়া কিছু হাল্‌কা হইলে গৃহান্তরে যাইবার জন্য উঠিল, উঠিয়া সেল্‌ফের বইগুলি টেবিলে স্তুপাকার দেখিয়া সহসা তাহার যেন চমক ভাঙ্গিল, ব্যস্ত হইয়া বইগুলি গুছাইয়া সেল্‌ফে তুলিতে গেল।

 সে বইগুলি সুশীলার যত্নের বই, বাল্যকালে তাঁহার পিতা তাঁহাকে আদর করিয়া পড়িতে দিয়াছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর সুশীলা তাহা অতি যত্নে রাখিয়াছিলেন। কেহ তাহাতে হাত দিলে তিনি অতিশয় বিরক্ত হইতেন, স্বহস্তে সেগুলি তিনি প্রত্যহ মুছিয়া রাখিতেন। একদিন কনক আপন পড়ার বই একখানি হারাইয়া সেই সেল্‌ফে তাহা খুঁজিতে গিয়াছিল, তাহাতে সুশীলা তাহাকে বকিয়াছিলেন এবং ভবিষ্যতে সেই সেল্‌ফে হাত দিতে বিশেষরূপে বারণ করিয়াছিলেন। সেই অবধি আর কনক তাহাতে হাত দিত না। এখন কনক তাড়াতাড়ি বই গুছাইতে যাইতেছে, এই সময় সহসা সুশীলা এই গৃহে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বালিকার মুখখানি শুকাইয়া গেল, চোরের ন্যায় সে সেইখানে দাঁড়াইয়া রহিল। তাহার বইগুলির ঐরূপ দুর্দ্দশা দেখিয়া সুশীলা অতিশয় বিরক্ত হইলেন।