পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছিন্নমুকুল

 সুশীলা সাশ্রুলোচনে ভগিনীর সহিত কথা কহিতে কহিতে মাঝে মাঝে মুক্ত বাতায়ন দিয়া এক একবার নিম্নস্থ সহরের প্রতি, এক একবার সেই সূর্য্যরশ্মিশোভিত সমুদ্রের প্রতি চাহিতেছিলেন। সুশীলার বয়ঃক্রম দ্বাবিংশতির অধিক হইবে না। দেখিতে সুশ্রী, চক্ষু নাসিকা ওষ্ঠাধর সকলি সুগঠন, কিন্তু বিধবার বেশ; যুবতী-মুখে প্রৌঢ়ার বিজ্ঞতা ব্যাপ্ত হওয়ায় তাঁহার সৌন্দর্য্যের তেমন আকর্ষণী শক্তি ছিল না। ইহারা দুইজনেই এলাহাবাদের সঙ্গতিপন্ন ব্রাহ্ম স্বর্গীয় তারাকান্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্যা। চারুশীলা বিবাহের পর হইতে স্বামীর সহিত বোম্বাই শহরে ছিলেন; সুশীলার বাল্যকাল হইতেই পিত্রালয়ে বাস। সুশীলা একদিন হঠাৎ শুনিলেন যে, বাণিজ্যে সর্ব্বস্বান্ত হইয়া ভগিনীপতির মৃত্যু হইয়াছে, এবং চারুশীলাও শয্যাগত; শুনিয়া সুশীলা ব্যাকুল হৃদয়ে তাঁহার দূর সম্পর্কীয় দেবর হিরণকুমারকে সঙ্গে লইয়া এখানে আসিয়াছেন।

 কত দিন পরে আজ দুই ভগিনীতে সাক্ষাৎ, সেই চতুর্দ্দশ বর্ষ বয়ঃক্রমের সময় স্বামীর সহিত চারুশীলা বোম্বাই চলিয়া আসেন, তখন সুশীলা দশম বর্ষীয়া মাত্র; সেই অবধি আর তাঁহাদের দেখা সাক্ষাৎ হয় নাই। তাহার পর এই অল্প দিনের মধ্যে দুজনের জীবনে কত ঘটনা ঘটিয়াছে, কত পরিবর্ত্তন হইয়াছে। সেই বিদায়ের সময় জীবনের কেবল আরম্ভ মাত্র, তখন জীবনে কতই সুখের আশা ছিল, কিন্তু ইহার মধ্যেই সব ফুরাইয়াছে, ইহার মধ্যেই দীপ নির্ব্বাণ হইয়াছে, দুজনেই বিধবা হইয়াছেন। এখন এই অবস্থায় দুজনের দেখা হইয়া তাঁহারা কত কাঁদিতেছিলেন, কাঁদিতে কাঁদিতে দুজনে কতই দুঃখের কথা কহিতেছিলেন, সে সকল এস্থলে বলা বাহুল্য মাত্র। অশ্রু মুছিতে মুছিতে একবার সুশীলা বাটীর সন্নিধানস্থ উদ্যানে দৃষ্টিপাত কারিলেন―দেখিলেন উদ্যানে দুইটি বালক বালিকা খেলিতেছে,