পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
ছিন্নমুকুল

নিস্তব্ধ রজনীর ভয়ঙ্কর ভাব বৃদ্ধি করিয়া তুলিতেছে, তাহা হইতেও ভয়ানক, তাঁহার শিয়রে বসিয়া একজন মনুষ্য অস্ফুট কণ্ঠে তাহাকে কি বলিতেছে। নিদ্রিত হইয়া সে তাহার বিপদের কথা সমস্ত ভুলিয়া গিয়াছিল, তাই নিদ্রাভঙ্গে সহসা শীর্ষদেশে মনুষ্য দেখিয়া সে পুনরায় চীৎকার করিবার উপক্রম করিল, কিন্তু তৎক্ষণাৎ আপনার বিপন্ন অবস্থা ও দস্যুদিগের সেই নিষেধ বাক্য মনে পড়ায় অমনি থামিয়া গেল। ব্যক্তি মৃদুস্বরে বলিল “ভয় নাই আস্তে কথা কও, আমি তোমাকে উদ্ধার করব।” যখন নীরজা ভাবিতেছিল তাহার আশা ভরসা কিছুই নাই—সে অকুল পাথারে ভাসিয়াছে, তখন রক্ষার কথা শুনিয়া মুমূর্ষু ব্যক্তির সুরা সেবনের ন্যায় সহসা আনন্দে তাহার হৃদয় স্পন্দিত হইয়া উঠিল— কিন্তু মুহূর্ত্ত মধ্যেই হতাশ্বাস হইয়া সন্দিগ্ধচিত্তে জিজ্ঞাসা করিল “তুমি কে? এখানে যারা ছিল তারা কোথায় গেল? তুমি আমাকে কেমন করে রক্ষা করবে?”

 উত্তর হইল “তারা ঘুমোতে গেছে, আমি এখন পাহারায় আছি, আমি এ নৌকার একজন দাঁড়ি, তোমার দুর্দ্দশায় দয়া হয়েছে। আমার কথামত কাজ করলে তোমাকে উদ্ধার করতে পারি।”

 নীরজা ভাবিল ‘আমি নিরুপায়, যদি এর প্রতারণার ইচ্ছা থাকে তা হলেও মরব, এখানে থাকলেও মরব, এরূপ স্থলে এ’কে বিশ্বাসই করা যাক। সে বলিল “কি করতে হবে?”

 “এখন কিছুই করতে হবে না, তুমি কেবল পালাবার চেষ্টা কর’ না, পরে আমি গোপনে কোন ভদ্রলোকের সাহায্য নিয়ে তোমাকে উদ্ধার করব। কিন্তু যা বলি বিশ্বাস করে কাজ করো।”

 নীরজা সে কথায় সম্মত হইল, তখন দাঁড়ি সেখান হইতে গিয়া নৌকার দ্বারদেশে শুইয়া রহিল। ক্রমে দিন যাইতে লাগিল, প্রত্যহই নীরজা উদ্ধারের জন্য লালায়িত হইতে লাগিল। দুই তিন দিনের মধ্যে