পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ
৪৩

নৌকা এলাহাবাদে আসিয়া লাগিল। যে দাঁড়ি নীরজাকে আশা দিয়াছিল, সে তীরে খাদ্য দ্রব্য কিনিতে নামিল, সুতরাং নৌকা তীরে লাগাইয়া অন্যেরা তাহার প্রত্যাগমন পর্য্যন্ত অপেক্ষা করিতে লাগিল। মাঝি খাদ্য সামগ্রী লইয়া নৌকায় উঠিয়া নীরজাকে চুপে চুপে বলিল “আর ভয় নেই, তোমার উদ্ধারের জন্য শীঘ্রই একখানি নৌকা আসছে।” নীরজা আনন্দে উৎফুল্ল হইয়া উঠিল, সে আকাঙ্ক্ষিত সময়ের জন্য বড়ই অধীর হইয়া পড়িল। ক্রমে সন্ধ্যা হইল, একটু একটু মেঘ করিয়া বৃষ্টি পড়িতে লাগিল, গবাক্ষপথে মুখ দিয়া অন্ধকার জলরাশির দিকে চাহিয়া চাহিয়া নীরজা উদ্ধারের আশায় ব্যাকুল হইয়া রহিল। প্রত্যেক নৌকাই ঝপ ঝপ্ শব্দে তাহার আশা বাড়াইয়া আবার চোখের উপর দিয়া অন্য দিকে চলিয়া যায়, নীরজা অমনি হতাশ অবসন্ন হইয়া পড়ে। দেখিতে দেখিতে অবশেষে সত্য সত্যই একখানি নৌকা তীব্রবেগে এই নৌকার নিকট আসিয়া ইহার গতিরোধ করিল, ভয়ে মাঝিরা নৌকা থামাইল, অমনি একটি ভদ্র যুরা লাফাইয়া এ নৌকায় উঠিয়া আসিলেন। ঘন ঘন বন্দুকের শব্দে ভীত হইয়া নৌকার লোকেরা তাঁহার সহিত বিবাদ করিল না; কে কোথায় লুকাইল, কে কোথায় পলাইল তাহার ঠিকানা রহিল না। সুতরাং অনায়াসে যুবা নৌকামধ্যে নীরজার নিকট আসিলেন। নৌকার দীপালোকে নীরজা সেই যুবাকে চিনিতে পারিল, নীরজা দেখিল—যামিনীনাথ তাহার উদ্ধারকারী। যামিনীনাথ তাহাকে দেখিয়া আশ্চর্য্য ভাবে বলিলেন “তুমি বনবালা! এস আমার সঙ্গে এই বোটে শীঘ্র এস।” দস্যুহস্তমুক্ত হইয়া আহ্লাদে নীরজার কথা কহিবার শক্তি ছিল না, সে নিঃশব্দে যামিনীনাথের সঙ্গে সঙ্গে গিয়া তাঁহার বোটে উঠিল। বোট ছাড়িয়া দিল।