পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
ছিন্নমুকুল

 “নীরজা কোথায়!” সে কি কথা! তখন বজ্র পড়িলেও প্রমোদ অধিকতর স্তম্ভিত হইতেন না। সন্ন্যাসী অধীরচিত্তে গর্জ্জন করিয়া আবার বলিলেন “আমার নীরজা কোথায়?” প্রমোদ তখন ধীরে ধীরে বিকম্পিতস্বরে প্রতিধ্বনির মত বলিলেন “নীরজা কোথায়!” সন্ন্যাসী আর সহিতে পারিলেন না, এই কথায় তাঁহার আপাদমস্তক জ্বলিয়া উঠিল, বিশাল নয়নে যেন বিজুলি ঝলসিত হইতে লাগিল, সরোষে প্রমোদের কণ্ঠদেশ দৃঢ়মুষ্টিতে ধরিয়া কহিলেন—


 “পামর! তুই কি কিছুই জানিসনে? বিশ্বাসঘাতক, আমার নীরজাকে হরণ ক’রে কোথায় রেখেছিস দে, নইলে তোর নিস্তার নেই।” প্রমোদ কষ্টে সন্ন্যাসীর হাত ছাড়াইয়া বলিলেন “মহাশয়, আপনি কি বলছেন? বাস্তবিক কি নীরজাকে তবে কেহ হরণ করেছে? নীরজা— নীরজা অপহৃত?” প্রমোদের আর বাক্য সরিল না, নীরজা অপহৃত হইয়াছে এই কথাটি তাঁহার মনে এতই লাগিল যে, প্রমোদ আর আপনাকে আপনি সামলাইতে পারিলেন না, চারিদিক অন্ধকার দেখিতে দেখিতে নত মস্তকে একটি বৃক্ষ শাখা ধরিয়া দাঁড়াইলেন। সন্ন্যাসীর সন্দেহ ইহাতে আরও বদ্ধমূল হইল; ভাবিলেন—দোষ প্রকাশ পাইয়াছে এই ভয়ে সহসা প্রমোদের মস্তক বিকম্পিত। আগে হইতেই সন্ন্যাসী মনে মনে প্রমোদকে দোষী ভাবিতেছিলেন। মনে মনে তাঁহার বিরুদ্ধে তিনি রাশি রাশি প্রমাণ পাইয়াছিলেন। প্রথমতঃ সেদিন কথাবার্ত্তায় নীরজার প্রতি প্রমোদকে অনুরক্ত বোধ হইয়াছিল; দ্বিতীয়তঃ প্রমোদের প্রতি নীরজারও অনুরাগ লক্ষ্য করিয়াছিলেন, এমন কি, প্রমোদ চলিয়া যাইবার পরেও নীরজা তাঁহার সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরিয়া প্রমোদেরই কথা কহিয়াছিল। তারপর সন্ন্যাসীর নৈমিষারণ্যে যাইবার কথা প্রমোদ বই কেহই জানিতেন না, প্রমোদই জানিয়াছিলেন সে সময়ে নীরজা একরূপ অরক্ষিতাবস্থায়