পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একাদশ পরিচ্ছেদ
৫১

পত্নীর আর কেহই ছিল না। সুতরাং ব্যয় করিতে প্রথম প্রথম তিনি কিছুমাত্র কুণ্ঠিত হইতেন না। কিন্তু এই রূপে দুই চারি বৎসরেই তিনি যখন পিতৃসঞ্চিত ধনের অর্দ্ধেক খােয়াইয়া ফেলিলেন তখন তাঁহার চেতনা হইল। তিনি দরাজ হাত ক্রমে গুটাইয়া আনিলেন, দানের মাত্রা সকলই প্রায় কমাইয়া ফেলিলেন। এখন তিনি সুবিধা পাইলে নিজেই কোন বন্ধুর ঘাড় ভাঙ্গিতে পারিলে ছাড়িতেন না।

 তিন চার বৎসর পূর্ব্বে, পিতার মৃত্যুর আগে যখন যামিনীনাথ কলেজে পড়িতেন তখন প্রমােদের সহিত তাঁহার আলাপ হয়। তাহার পর কলেজ ছাড়িয়াও যামিনী প্রমােদকে সর্ব্বদা নিমন্ত্রণ আমন্ত্রণ করিতেন, সর্ব্বদাই প্রমােদের সঙ্গে দেখা করিতে যাইতেন। আসল কথা প্রমােদ, ধনবান তারাকান্তের বিষয়ের ভবিষ্য-মালিক, সুতরাং এখন হইতেই যামিনীনাথ তাঁহাকে আপন দলে টানিবার অভিপ্রায়ে ছিলেন। পরস্পর নানা মতের বিভিন্নতা সত্ত্বেও ক্রমে এইরূপে যামিনীর সহিত প্রমােদের বিশেষ বন্ধুতা জন্মিল; কিন্তু নীরজা যামিনীনাথের সহিত তাঁহার বাড়ী আসা অবধি আর প্রমােদের সহিত যামিনীর দেখা শুনা হয় নাই। সেই অবধি আর প্রমােদকে নিমন্ত্রণ করা বা প্রমোদের বাড়ী যাওয়া যামিনীর ঘটিয়া উঠে নাই। প্রমােদও অবকাশ অভাবে এখানে আসিতে পারেন নাই। আজ প্রমােদ এখানে আসিয়া শুনিলেন—যামিনীনাথ বাড়ী নাই, কিন্তু শীঘ্রই ফিরিবেন শুনিয়া তাহার বৈঠকখানা গৃহে আসিয়া বসিলেন।

 যামিনীনাথের একটু বিশেষরূপে পরিচয় দিবার নিমিত্ত এই স্থলে আর একটি কথা বলা আবশ্যক। যামিনীনাথ বিদেশীয় রীতিনীতি ও আচারব্যবহারের বড় বিদ্বেষী; ভালই হৌক্ আর মন্দই হৌক্ এ সকলের প্রতি তাঁহার দারুণ ঘৃণা। এমন কি বিদেশীয় ভাষা আর শিখিবেন না বলিয়াই তিনি স্কুল ত্যাগ করেন। কিন্তু যে ঘরটিতে