পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
৫৭

তাঁহার এখন থিয়েটারে যাইবার মতন মনের অবস্থাই নহে, তাহার পর আবার কয়েক মাস পূর্ব্বে যামিনীর সহিত থিয়েটার সার্কাস ইত্যাদি দেখিতে গিয়া তিনি একরূপ রিক্তহস্ত,—সেই জন্য তিনি প্রথমে দুই একবার ওজর করিলেন, কিন্তু যামিনী যখন তবুও তাঁহার পিঠ চাপড়াইয়া জোর করিয়া বলেন “তা কি হয়, চল যাওয়া যাক, আমি শীঘ্রই খেয়ে আসছি”—

 তখন আর প্রমোদ তাঁহার কথা অগ্রাহ্য করিতে পারিলেন না। যামিনী খাইয়া আসিবার পর তাঁরা দু’জনে থিয়েটার দেখিতে চলিলেন।

 যামিনীর মাথার তখন বড় একটা ঠিক ছিল না, বাড়ী হইতে দুই এক পাত্র তরল উত্তেজনায় উত্তেজিত হইয়া আসিয়াছিলেন। থিয়েটার গৃহে প্রবেশ করিবার সময় একজন কনেষ্টবলের গাত্রে গাত্র ঠেকায় তিনি অপমান বোধ করিয়া নিরপরাধ কষ্টেবলকে এক ঘুসি বসাইয়া দিলেন,

 আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি, যামিনীনাথ বড় দেশানুরাগী। ভালই হৌক মন্দই হৌক বিদেশীয় অনুকরণের নামমাত্রেই জ্বলিয়া উঠেন, অথচ সুবিধার অনুরােধে ইংরাজী প্রথায় গৃহ সাজাইতে, বিলাসের অনুরােধে ইংরাজী বুট ট্রাউজার্‌স্ ও কোট পরিতে এবং সভ্যতার অনুরোধে হাতের পরিবর্ত্তে কাঁটা চামচ ব্যবহার করিতে কুণ্ঠিত হন না। বন্ধুদের অনুরােধে বিলাতী মদ্যের প্রতিও তাহার ঘৃণা ছাড়িতে হইয়াছিল।

বিদেশীয় অনুকরণের প্রতি তাঁহার যেমন ঘৃণা, ভারত-গৌরব-লােপকারী বিদেশীয়গণের প্রতিও তাঁহার তেমনি জাতক্রোধ; ভারতের অস্তমিত গৌরবদিন ফিরাইবার জন্য তিনি প্রাণপণ করিয়াছিলেন, এমন কি অনেক সময় স্কুলের ছাত্রদিগকে সমবেত করিয়া আর্য্যগরিমার পুনরুদ্দীপন