পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
ছিন্নমুকুল

হোটেলে খানা দেও, আজ সারকস দেখিয়া আসি—এইরূপ ধরিয়া পড়িতেন, প্রমোদেরও ধনশালী বলিয়া মনে মনে একটু অহঙ্কার আছে, তিনিও সহজে সে নামটি খোয়াইতে চাহিতেন না। পরে আবশ্যকীয় খরচের জন্য কনকের কাছে টাকা না চাহিলে চলিত না; সুশীলার নিকট চাহিবার যো নাই; সুশীলার বিশ্বাস বেশী টাকা হাতে পাইলেই ছেলেদের স্বভাব বিগড়িয়া যায়, তাঁহার নিকট চাহিলে টাকা পাওয়া দূরে থাকুক বরঞ্চ তাঁহার ক্রোধ ও বিরক্তিভাজন হইবেন, প্রমোদের স্বভাবের প্রতি তাঁহার সন্দেহ হইবে। কি করেন, প্রমোদ দরকার হইলেই চুপে চুপে অগত্যা কনককে পত্র লিখিতেন, কনক কষ্টে সৃষ্টে যে কোন প্রকারেই হউক প্রমোদকে টাকা পাঠাইত। টাকার যোগাড় করিতে কনকের যে কিরূপ মাথা কুটাকুটি করিতে হইত, জানিলে হয় তো প্রমোদেরও মায়া হইত, অযথা খরচ বিষয়ে হয় তো তিনিও সাবধান হইতেন, কিন্তু এপর্য্যন্ত কনক কখনও সে কষ্টের কথা প্রমোদকে বলে নাই। কনক মাসে মাসে যে ১৫ টাকা করিয়া সুশীলার নিকট হইতে জলপানী পাইত, তাহা সে ভ্রাতাকে দিত তাহা ছাড়া রাত্রি জাগিয়া সেলাই করিত এবং গোপনে তাহা বিক্রয় করিয়া টাকাগুলি ভ্রাতাকে পাঠাইত।

 বিশ, পঁচিশ টাকা বলিয়া যেন কনক কষ্টে সৃষ্টে ভাইকে মাঝে মাঝে তাহা যোগাইত, কিন্তু এবার যে প্রমোদ হিতাহিত বিবেচনা শূন্য হইয়া একেবারে ২০০ শত টাকা চাহিয়া পাঠাইয়াছেন, ইহা এখন কনক কোথা হইতে কেমন করিয়া দিবে? অথচ না দিলেই নয়, প্রমোদ লিখিয়াছেন টাকা না পাইলে তাঁহাকে জেলেও যাইতে হইতে পারে। কি ভয়ানক! বালিকা তো ভাবিয়া আকুল। সুশীলার নিকটেও টাকা চাহিবার যো নাই, তাহা আবার প্রমোদের নিষেধ। প্রমোদ জানিতেন কনকের কাছে টাকা চাহিলেই পাইবেন, এমন স্থলে