পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রয়ােদশ পরিচ্ছেদ
৬৩

আর সেলাইগুলােই উঠলো। অত দামের আংটিটী—বলে কি না পঞ্চাশে দাও ত বাঁধা রাখি। তাও আজ টাকা দেবে না,বলে রেখে যা, যাচাই করে নেব। কাপড় দুখানা তুমি বল্লে ১৫০ টাকা দাম—তারা কেউ ৫০ এর বেশী দিতে চায় না। তাই রাগ কোরে ফেরত আন্‌নু। এত তাড়াতাড়ি কি কিছু দর পাওয়া যায় গা।”

 কনক একেবারে যেন বসিয়া পড়িল। এখনো দেড় শত টাকার অনটন। কিরূপে আজই ইহার জোগাড় করে। হাতের বালা ছাড়া তাহার অন্যান্য যথা সর্ব্বস্ব দামী সম্পত্তি সে টাকা সংগ্রহের জন্য দিয়াছিল!—এখন এই দুগাছি বাঁধা দেওয়া ছাড়া উপায়ান্তর দেখিল না। অথচ তাহাতে কিরূপ বিপদ তাহাও বুঝিল। সুশীলা জানিলে রক্ষা রাখিবেন না। তাহার পুরাতন বালা ছােট হওয়াতে সবে মাত্র দুই দিন হইল এই নূতন বালা সুশীলা তাহাকে পরিতে দিয়াছেন, এখনো ইহার দাম পর্য্যন্ত দেওয়া হয় নাই। কিন্তু কি করিবে,—আজই দুই শত টাকা না পাঠাইলে প্রমােদের জেলে যাইতে হইবে! এখন অন্য বিপদ ভাবিবার সময় কোথা? সে হাতের বালা খুলিয়া দাসীকে দিয়া বলিল—“তুই এই দুগাছি নিয়ে যা, বাঁধা রেখে ১৫০ টাকা নিয়ে আয়, জানিসত দাদা বাবু চেয়েছেন—আজ না পাঠালেই নয়।”—

 দাসী। কিন্তু মাঠাকরুণ হাত খালি দেখলে যে রাগ করবেন্ গা, তখন কি হবে? দাদা বাবু কি আর মায়ের কাছে চাইতে নারলে!

 কনক। মা কি দিতেন—কেবল বকতেন। যাহ’ক তুই যেন মাকে বলিসনে, দাদার কাছ থেকে আমি তােকে বক্‌সিস চেয়ে দেব, যা তুই এখন বালা জোড়া নিয়ে যা—শীঘ্র টাকাটা এনে দে।” প্রমোদ ত দাসীকে বলিতে বারণ করেন নাই,—আর দাসীকে না বলিয়াই বা তাহার উপায় কি? কি করিয়া নহিলে আজই টাকার জোগাড় করে।—