পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ
৭১

যাইতেছিল, প্রত্যেক চিন্তার সঙ্গেই যেন সে মূর্ত্তি কোন না কোন প্রকারে জড়িত। সন্ন্যাসীর দারুণ সন্দেহের কথাও মাঝে মাঝে মনে পড়িয়া তাঁহাকে ব্যথিত করিয়া তুলিতেছিল; এরূপ জঘন্য দোষে তাঁহাকে দোষী করা সন্ন্যাসীর কি ভয়ানক অন্যায়! কি করিয়া তিনি তাঁহার সে সন্দেহ হইতে মুক্ত হইবেন? নীরজার পিতার চক্ষে দোষী থাকা কি ভয়ঙ্কর কষ্টকর। এইরূপ এদিক ওদিক কত কি ভাবিতে ভাবিতে প্রমোদ চৌরঙ্গির রাস্তায় আসিয়া পড়িলেন। দেখিলেন অপরাহ্নের কনককিরণোজ্জল শ্যামদূর্ব্বাদল-পূর্ণ মাঠে কোথাও যুবকেরা ক্রিকেট খেলিতেছে, কোথাও ফুটবল চলিতেছে, কোথাও সুন্দর সুন্দর বালক বালিকাগণ দাসদাসীর নজরবন্দী হইয়া ঘুরিয়া ফিরিয়া বেড়াইতেছে। প্রমোদ একবার সেই ক্রীড়াকৌতুক প্রফুল্ল মাঠের দিকে চাহিয়া দেখিলেন, একবার সেই দিগন্তবর্ত্তী সূর্য্যের প্রতি চাহিয়া দেখিলেন; তাহার পর আবার নিজের ভূতভবিষ্যৎ-বর্ত্তমান চিন্তায় নিমগ্ন হইয়া পড়িলেন। কিছু পরে আবার যখন তাঁহার মাঠের দিকে দৃষ্টি পড়িল তখন দেখিলেন, অস্তগামী সূর্য্যের হেমাভ রশ্মি সেই শ্যামলক্ষেত্র-প্রান্তরে জ্বলিতেছে, বৃহৎ বৃহৎ অট্টালিকা-চূড়ায় জ্বলিতেছে; এবং সেই মাঠের দূরপ্রান্তে একজন জটাধারী ব্যক্তির মুখে পড়িয়াছে। প্রমোদ নীরজার পিতাকে চিনিতে পারিলেন; চিনিয়া তাহার মুখ যেন হর্ষোৎফুল্ল হইল; তিনি দ্রুতপদে সন্ন্যাসীর নিকট আসিলেন। হঠাৎ প্রমোদকে দেখিয়া সন্ন্যাসীও কিছু আশ্চর্য্য হইলেন। প্রমোদ বলিলেন—

 “মহাশয়, আপনার সহিত একটু বিশেষ কথা আছে।” নীরজার সম্বন্ধে কিছু হইতে পারে ভাবিয়া সন্ন্যাসী তাঁহার সহিত মাঠের একটি নির্জ্জন প্রান্তে আসিয়া পঁহছিবামাত্র প্রমোদ বলিলেন “মহাশয়, আপনাকে আমি খুঁজছিলেম। দেখা পেয়ে যে কত সুখী হলেম কি বলব।”