পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
ছিন্নমুকুল

ভবানীপুরে পদার্পণ করিলেন;[১] গির্জ্জার ঘড়িতে ঠং ঠং করিয়া আটটারও ঘণ্টা পড়িল।

 রজনী দীপমালায় উজ্জ্বলিত নহে, রাজপথ অধিকাংশই গলি ঘুঁজি, গলির সুদূর মোড়ে মোড়ে এক একটি অনুজ্জ্বল তৈলদীপ গলিপথে বৃহৎ ছায়া বিস্তার করিয়া মিটি মিটি জ্বলিতেছে। পথিপার্শ্বের বৃহৎ বৃহৎ অট্টালিকাবলী, এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুটীরশ্রেণী সমভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন; কেবল আকাশে কৃষ্ণবর্ণ মেঘে নক্ষত্র হাসিতেছে, নীচে যত্রতত্র দুই একটি খদ্যোৎ জ্বলিতেছে, এবং অট্টালিকা-শ্রেণীর মুক্ত বাতায়ন-পথে এবং কুটীর দ্বার দিয়া গৃহমধ্যস্থ আলোকরেখা দৃষ্ট হইতেছে। সেই অন্ধকার পথে কখনও দুই একটি গ্রাম্য কুকুর চীৎকার করিয়া প্রমোদের পথপার্শ্ব দিয়া দৌড়িয়া যাইতেছিল, কখনও বা মাথার উপর দিয়া কোন নিশাচর পক্ষী কর্কশ রবে ক্ষণকালের জন্য চিন্তামগ্ন প্রমোদের চিন্তা ভঙ্গ করিয়া উড়িয়া চলিয়াছিল। পথে মাঝে মাঝে দুই একটি লোক চলিতেছিল, অন্ধকারে তাহাদিগকে স্পষ্ট চেনা যায় না, প্রমোদও চিনিতে বড় একটা উৎসুক ছিলেন না। তিনি সেই অন্ধকারময়ী স্নিগ্ধ রজনীতে কোন দিকে ভ্রূক্ষেপ না করিয়া আপন মনেই চলিতেছিলেন। সহসা তাঁহার চিন্তা ভঙ্গ হইল, পিস্তলের শব্দে চমকিত হইয়া তিনি ফিরিয়া দাঁড়াইলেন, অমনি দুইজন মনুষ্য তাঁহার পশ্চাৎ হইতে দৌড়িয়া চলিয়া গেল। তাহাতে তাঁহার স্পষ্ট মনে হইল, যে পলাতকেরা তাঁহারই প্রতি যেন পিস্তল লক্ষ্য করিয়াছিল। তাহারা কোথায় গেল অন্ধকারে ঠিক বুঝা গেল না, কিন্তু বোধ হইল, একটা অট্টালিকাপ্রাচীরে তাহারা


  1. ছিন্নমুকুল ৩০ বৎসরও পূর্ব্বেকার লেখা। তখন ভবানীপুর এখনকার মত সুবিস্তৃত রাজপথসমুহে বা এমন দীপস্তম্ভাবলীতে সুশোভিত ছিল না।