পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
ছিন্নমুকুল

রহিল না। প্রমোদ আশ্চর্য্য ও স্তম্ভিত ভাবে মুহুর্ততকাল দাঁড়াইয়া আবার তাহাদের অনুসরণে চলিলেন। ইতস্ততঃ চাহিয়া কিছুই দেখিতে পাইলেন না, আবার সেই অট্টালিকার পশ্চাদ্‌ভাগে আসিয়া অন্বেষণ করিলেন, এবারেও সেখানে কাহাকেও না পাইয়া তিনি ঘুরিয়া অট্টালিকার সদর-দ্বারে আসিলেন। সেখানে আসিয়া দেখিলেন, ভিতরে আলোক জ্বলিতেছে, কিন্তু দ্বার বন্ধ। তাহার ঠেলাঠেলিতে একজন উড়িষ্যাবাসী দ্বার খুলিয়া বলিল, “বাবু কেরেয়া লইব, ৫০ মুদ্রা।” প্রমোেদ উক্ত ছুতায় বাটীর মধ্যে প্রবেশ করিলেন, ভৃত্যের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত বাড়ীময় ঘুরিয়া বেড়াইয়া অবশেষে কাহাকেও না দেখিয়া “কোঠি কুচ কামকা নেহি,” এই বাক্যে তাহাকে আশ্বাস প্রদান করিয়া গৃহ নিষ্ক্রান্ত হইলেন। চলিতে চলিতে পথে কিছু দূরে আসিয়া দেখিলেন একব্যক্তি পিস্তল হস্তে ত্রস্তে একটা গলির মধ্যে ঢুকিল। যাইবার সময় দীপালোক মুখে পড়ায় প্রমোদ হিরণকুমারকে চিনিতে পারিলেন। চিনিয়া চমকিয়া উঠিলেন! একি! হিরণ পিস্তল হস্তে এমন অপ্রকৃতিস্থ ব্যস্তভাবে দ্রুতপদে গলির মধ্যে লুকাইল! হিরণ কি প্রমোদকে মারিতে চেষ্টা করিয়াছিল? অবস্থার ইন্দ্রজালে চকিতের মত প্রমোদের মনে এই সন্দেহ প্রবেশ করিল, কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তার অবসর পাইয়া তিনি ভাবিলেন—“কিন্তু তাহা কি করিয়া হইবে? হিরণ আমাকে মারিতে যাইবে কেন? আমি তাহার কি শত্রুতা করিয়াছি? আমাকে মারিয়া তাহার কি লাভ? আমি জানি হিরণ আমাকে দেখিতে পারে না,— আমি জানি সেই জন্যই আমাকে মকদ্দমায় অন্যায় দণ্ড দিয়াছে কিন্তু তাই বলিয়া সে যে আমার প্রাণবধ করিতে যাইবে ইহা অসম্ভব। আমিও ত তাহাকে দেখিতে পারি না, দেখিলেই সর্ব্বাঙ্গ জ্বলিয়া যায়, কিন্তু সে জন্য প্রাণবধ ইচ্ছা ত দূরের কথা—তাহার কোন অনিষ্ট চিন্তাও কি আমার মনে