পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



মুকুট

ত্রিপুরার রাজা অমরমাণিক্যের কনিষ্ঠ পুত্র রাজধর সেনাপতি ইশা খাঁকে বলিলেন, “দেখো সেনাপতি, আমি বার বার বলিতেছি, তুমি আমাকে অসম্মান করিয়ো না।”

 পাঠান ইশা খাঁ কতকগুলি তীরের ফলা লইয়া তাহাদের ধার পরীক্ষা করিতেছিলেন। রাজধরের কথা শুনিয়া কিছুই বলিলেন না, কেবল মুখ তুলিয়া ভুরু উঠাইয়া একবার তাহার মুখের দিকে চাহিলেন। আবার তখনই মুখ নত করিয়া তীরের ফলার দিকে মনোযোগ দিলেন।

 রাজধর বলিলেন, “ভবিষ্যতে যদি তুমি আমার নাম ধরিয়া ডাক, তবে আমি তাহার সমুচিত প্রতিবিধান করিব।”

 বৃদ্ধ ইশা খাঁ সহসা মাথা তুলিয়া বজম্বরে বলিয়া উঠিলেন, “বটে!”

 রাজধর তাহার তলোয়ারের খাপের আগা মেঝের পাথরের উপরে ঠক্‌ করিয়া ঠুকিয়া বলিলেন, “হাঁ।”

 ইশা খাঁ বালক রাজধরের বুক-ফুলানোর ভঙ্গি ও তলোয়ারের আস্ফালন দেখিয়া থাকিতে পারিলেন না, হা হা করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। রাজধরের সমস্ত মুখ, চোখের সাদাটা পর্যন্ত লাল হইয়া উঠিল।

 ইশা খাঁ উপহাসের স্বরে হাসিয়া হাত জোড় করিয়া বলিলেন, “মহামহিম মহারাজাধিরাজকে কী বলিয়া ডাকিতে হইবে। হুজুর, জনাব, জাহাপনা, শাহেন শা—”

 রাজধর তাহার স্বাভাবিক কর্কশ স্বর দ্বিগুণ কর্কশ করিয়া কহিলেন, “আমি তোমার ছাত্র বটে, কিন্তু আমি রাজকুমার— তাহা তোমার মনে নাই!”