পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
ছুটির পড়া

 ইশা খাঁ তীব্রস্বরে বলিলেন, “বস। চুপ। আর অধিক কথা কহিয়ো না। আমার অন্য কাজ আছে।” বলিয়া পুনরায় তীরের ফলার প্রতি মন দিলেন।

 এমন সময় ত্রিপুরার দ্বিতীয় রাজপুত্র ইন্দ্রকুমার তাঁহার দীর্ঘ প্রশস্ত বিপুল বলিষ্ঠ দেহ লইয়া গৃহে প্রবেশ করিলেন। মাথা হেলাইয়া হাসিয়া বলিলেন, “খাঁ-সাহেব, আজিকার ব্যাপারটা কী।” ইন্দ্রকুমারের কণ্ঠ শুনিয়া বৃদ্ধ ইশা খাঁ তীরের ফলা রাখিয়া সস্নেহে তাঁহাকে আলিঙ্গন করিলেন; হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “শোনো তো বাবা, বড়ো তামাশার কথা। তোমার এই কনিষ্ঠটিকে— মহারাজচক্রবর্তীকে জাঁহাপনা জনাব বলিয়া না ডাকিলে উহার অপমান বোধ হয়!” বলিয়া আবার তীরের ফলা লইয়া পড়িলেন।

 “সত্য নাকি!” বলিয়া ইন্দ্রকুমার হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিলেন।

 রাজধর বিষম ক্রোধে বলিলেন, “চুপ করে দাদা।”

 ইন্দ্রকুমার বলিলেন, “রাজধর, তোমাকে কী বলিয়া ডাকিতে হইবে। জাঁহাপনা! হা হা হা হা।”

 রাজধর কাঁপিতে কাঁপিতে বলিলেন, “দাদা, চুপ করো বলিতেছি।”

 ইন্দ্রকুমার আবার হাসিয়া বলিলেন, “জনাব।”

 রাজধর অধীর হইয়া বলিলেন, “দাদা, তুমি নিতান্ত নির্বোধ।”

 ইন্দ্রকুমার হাসিয়া রাজধরের পৃষ্ঠে হাত বুলাইয়া বলিলেন, “ঠাণ্ডা হও ভাই, ঠাণ্ডা হও। তোমার বুদ্ধি তোমার থাক, আমি তোমার বুদ্ধি কাড়িয়া লইতেছি না।”

 ইশা খাঁ কাজ করিতে করিতে অtড়চোখে চাহিয়া ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “উহার বুদ্ধি সম্প্রতি অত্যন্ত বাড়িয়া উঠিয়াছে।”

 ইন্দ্রকুমার বলিলেন, “নাগাল পাওয়া যায় না।”

 রাজধর গসগস করিয়া চলিয়া গেলেন। চলনের দাপে খাপের মধ্যে তলোয়ারখানা ঝনঝন করিতে লাগিল।