পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাজের লোক কে રસો বাহা বলিলেন তাহার অর্থ এই যে, পৃথিবীর ভালো করো, ঈশ্বরে মন দাও— টাকা রোজগার করিয়া পেট ভরিয়া খাওয়ার চেয়ে ইহাতে বেশি কাজ দেখে । ফকিরের এই কথাটা হঠাৎ এমনি নানকের মনে লাগিল যে, তিনি চমকিয়া উঠিলেন, ফকিরের মুখের দিকে একবার চাহিয়া দেখিলেন ও মূৰ্ছিত হইয়া পড়িলেন। মূৰ্ছা ভাঙিতেই তিনি গরিৰ লোকদিগকে ডাকিলেন ও শস্য যাহা-কিছু ছিল সমস্ত তাহাদিগকে বিলাইয়া দিলেন । নানক আর ঘরে থাকিতে পারিলেন না । কাজকর্ম সমস্ত ছাড়িয়া দিয়া তিনি পলাইয়া গেলেন । নানক পলাইলেন বটে, কিন্তু অনেক লোক র্তাহার সঙ্গ লইল । র্যাহার ধর্মের দিকে টান, এমন মধুর ভাব, এমন মহৎ স্বভাব, তিনি সকলকে ছাড়িলেও র্তাহাকে সকলে ছাড়ে না। মর্দানা র্তাহার সঙ্গে গেল ; সে ব্যক্তি বীণা বাজাইত, গান গাহিত। লেন তাহার সঙ্গে গেল। সেই-যে পুরানো চাকর বালসিন্ধু ছেলেবেলায় নানকের সঙ্গে জুন বিক্রয় করিয়া টাকা লাভ করিতে গিয়াছিল, আজ সেও নানকের সঙ্গে চলিল। এবারেও বোধ করি কিঞ্চিৎ ধনলাভের আশা ছিল, কিন্তু যে-সে ধন নয়, সকল ধনের শ্রেষ্ঠ যে ধন সেই ধর্ম। রামদাসও নানককে ছাড়িতে পারিল না— তাহার বয়স বেশি হইয়াছিল ৰলিয়া সকলে তাহাকে বলিত বুড ঢা। আর কত নাম করিব, এমন ঢের লোক সঙ্গে গেল । নানক যথাসাধ্য সকলের উপকার করিয়া সকলকে ধর্মোপদেশ দিয়া দেশে দেশে বেড়াইতে লাগিলেন। হিন্দু-মুসলমান সকলকেই তিনি ভালোবাসিতেন। হিন্দুধর্মের যাহা দোষ ছিল তাহাও তিনি ৰলিতেন, মুসলমানধর্মের যাহা দোষ ছিল, তাহাও তিনি বলিতেন । অথচ হিন্দু-মুসলমান সকলেই তাহাকে ভক্তি করিত। নানক আমাদের বাংলাদেশেও আসিয়াছিলেন। শিবনাভু বলিয়া কোন এক দেশের রাজা নানা লোভ দেখাইয়া নানককে উচ্ছন্ন দিবার চেষ্টা