পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰীরজননী 86t প্রতিদিন তাহার গৃহের নিকটবর্তী পাহাড় কিম্বা গাছপালা-বিশিষ্ট কোনো বিজন স্থানে সংসার হইতে এবং সাংসারিক বিষয় হইতে মনকে প্রত্যাহার করিয়া ভগবানের পূজা-অৰ্চনা ধ্যান-ধারণায় নিযুক্ত থাকিতেন । সাত বৎসর বিচ্ছেদের পর মাতাপুত্রে পুনর্বার সাক্ষাৎ হইল । যুদ্ধ শেষ হইলে ওয়াশিংটন সৈন্যসামস্ত লইয়৷ ইয়র্ক টাউন হইতে ফিরিয়া আসিলেন । তিনি ঘোটক-পুষ্ঠ হইতে অবতরণ করিয়া মাতার নিকট র্তাহার আগমন-সংবাদ পাঠাইলেন এবং সৈন্যসামন্ত জাকজমক পশ্চাতে রাখিয়া তিনি একাকী পদব্রজে র্তাহার মাতৃগৃহাভিমুখে চলিলেন। তিনি জানিতেন, জাকজমক আড়ম্বরে তাহার মাতা আহলাদিত হইবেন না। গৃহকত্রী একাকী সাংসারিক কাজকর্ম করিতেছিলেন এমন সময়ে শুনিলেন, তাহার পুত্র দ্বারদেশে উপস্থিত। তিনি র্তাহার ছেলেবেলার নাম ধরিয়া তাহাকে সস্নেহে গাঢ় আলিঙ্গন করিলেন— তাহার স্বাস্থ্যের বিষয় জিজ্ঞাসা করিলেন— বলিলেন যুদ্ধের ভাবনায় তাহার মুখে কষ্টের রেখা পড়িয়াছে ; সে কালের কথা, পুরাতন বন্ধুদিগের বিষয়, অনেক বলিলেন, কিন্তু পুত্রের নবোপার্জিত যশ-গৌরবের বিষয় একটি কথাও বলিলেন না । ইতিমধ্যে গ্রামের মধ্যে মহা ধুম পড়িয়া গেল— ফরাসি ও আমেরিক -সৈন্যেরা, সেনানায়কগণ ও পাশ্ববর্তী স্থানের ভদ্রলোকেরা বিজয়ীকে অভ্যর্থনা করিবার জন্য আসিয়া উপস্থিত হইল । গ্রামবাসীগণ নৃত্য-আমোদ-আহলাদের একটি প্রকাণ্ড আয়োজন করিল এবং বিশেষ করিয়া ওয়াশিংটনের মাতাকে নিমন্ত্রণ করিল। সকলেই মনে করিতেছিল, য়ুরোপীয় প্রথা অনুসারে ওয়াশিংটনের মাতা নিমন্ত্রণস্থলে খুব সাজসজ্জা ও খুব ধুমধাম করিয়া আসিবেন। কিন্তু যখন তাহারা দেখিল, তাহার পুত্রের বাহুতে ভর দিয়া অতি সামান্য বেশে তাহার মাতা অভ্যর্থনা-গৃহে প্রবেশ করিলেন তখন