পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আবদুল বললে, ‘জলের উপর তার নাকের ডগা দেখেছি অনেকবার। নদীর ঢালু ডাঙায় লম্বা হয়ে শুয়ে সে যখন রােদ পােহায়, মনে হয়, ভারী বিচ্ছিরি হাসি হাসছে। বন্দুক থাকলে মােকাবিলা করা যেত। লাইসেন্‌স ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু মজা হল। একদিন কাঁচি বেদেনি ডাঙায় বসে দা দিয়ে বাখারি চাঁচছে, তার ছাগল-ছানা পাশে বাঁধা। কখন নদীর থেকে উঠে কুমিরটা পাঁঠার ঠ্যাঙ ধরে জলে টেনে নিয়ে চলল। বেদেনি একেবারে লাফ দিয়ে বসল তার পিঠের উপর। দা দিয়ে ঐ দানো-গিরগিটির গলায় পোঁচের উপর পোঁচ লাগালাে। ছাগল-ছানা ছেড়ে জন্তুটা ডুবে পড়ল জলে।’

 আমি ব্যস্ত হয়ে বললুম, ‘তার পরে?’

 আবদুল বললে, ‘তার পরেকার খবর তলিয়ে গেছে জলের তলায়, তুলে আনতে দেরি হবে। আসছে বার যখন দেখা হবে চর পাঠিয়ে খোঁজ নিয়ে আসব।’

 কিন্তু আর তাে সে আসে নি, হয়তাে খোঁজ নিতে গেছে।


 এই তাে ছিল পাল্কির ভিতর আমার সফর। পাল্কির বাইরে এক-একদিন ছিল আমার মাস্টারি; রেলিঙগুলাে আমার ছাত্র, ভয়ে থাকত চুপ। এক-একটা ছিল ভারি দুষ্ট, পড়াশুনােয় কিচ্ছুই মন নেই; ভয় দেখাই যে, বড়াে হলে কুলিগিরি করতে হবে। মার খেয়ে আগাগােড়া গায়ে দাগ পড়ে গেছে, দুষ্টুমি থামতে চায় না— কেন-না, থামলে যে চলে না, খেলা বন্ধ হয়ে যায়। আরাে একটা খেলা ছিল, সে আমার কাঠের সিঙ্গিকে নিয়ে। পূজায় বলিদানের গল্প শুনে

১৬